নবী-সাহাবী ও আউলিয়াদের নাম উচ্চারণের নিয়মাবলী:
যখন পূর্ববর্তী কো নবরি নাম উচ্চারণ করা হয় তখন তাদের উপর এভাবে দরূদ পাঠাতে হয় আর যদি পূর্ববর্তী একাধিক নবরি নাম উচ্চারণ করা হয় তখন বলতে হবে আলা নাবিয়্যিনা ওয়াআলাই হিমুস্সালাতু ওয়াস্সালাম। আর আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর নাম নেওয়ার সাথে সাথে তাঁর প্রতি দরুদ পাঠ করা ওয়াজিব। কাজেই বলতে হবে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। অর্থাৎ আল্লাহ পাক তাঁর প্রতি শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন। কোন পুরুষ সাহাবীর নাম নেওয়া বা শোনার সাথে সাথে বলতে হবে, রাজিয়াল্লাহু আনহু।
অর্থ: আল্লাহ তাঁর ব্যাপারে সন্তুষ্ট হয়েছেন। কোন মহিলা সাহাবীর নামে আসলে পড়তে হয়, রাজিয়াল্লাহু আনহা। অর্থাৎ আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারা একাধিক হলে পড়তে হয়, রাজিয়াল্লাহু আনহুন্না। অর্থ আল্লাহ্ তায়ালা তাঁদের সকলের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। কোন ওলীর নাম আসলে বলতে হয়, রাহমাতুল্লাহি আলাইহি অর্থ তাঁর উপর আল্লাহর করুণা হোক (যদি তিনি মৃত হন) আর জীবিত হলে বলতে হয় দামাত বারাকাতুহুম বা মাদ্দা জিল্লুহুল আলী।
ইসলাম ধর্মের মূল স্তম্ভ সমূহ:
ইসলাম একটি শান্তির ধর্ম। ইসলাম শব্দের অর্থই হল- আনুগত্যের জন্য স্বীয় গর্দান ঝুঁকিয়ে দেয়া। তাই মুসলমানগণ সর্বাবস্থায় আল্লাহর আনুগত্যেই নিয়োজিত। কি ব্যবসা, কি বানিজ্য, কি পারিবারিক জীবন, কি সামাজিক জীবন সকল ক্ষেত্রেই মুসলমানগণ আল্লাহ্ কর্তৃক নির্দেশিত হুকুম আহকাম মেনে চলতে বাধ্য। ইসলাম একটি বৃক্ষ সাদৃশ। এর শাখা প্রশাখা অকে বিস্তৃত আর এদিকে ইশারা করেই নবী করীম (স) বলেছেনঃ
অর্থ: ইসলামের মূল ভিত্তি হচ্ছে পাঁচটি বিষয়ের উপর (১) আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত আর কেউ নেই এবং মুহাম্মাদ (স) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল, এই সাক্ষী দেয়া (২) নামাজ প্রতিষ্ঠা করা (৩) যাকাত প্রদান করা। (৪) বায়তুল্লাহ শরীফে হজ্জ করা। (৫) রমযান মাসের রোযা রাখা।
কালেমার বিবরণ:
ইসলামে মূল পাঁচটি স্তম্ভের প্রথম হল ঈমান। এ প্রথম স্তম্ভটি না থাকলে বাকী চারটি কোন কাজে আসে না। তাইতো নবী করিম (স) বলেন-
অর্থঃ হসরত আবুযর গিফারী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (স)-এর পিছনে একটি গাধার উপবিষ্ট ছিলাম তখন নবী করীম (সঃ) আমাকে হে আবুযর বলে তিনবার সম্বোধন করলেন। আমি তিনবার বললাম উপস্থিত ইয়া রাসূলাল্লাহ্ আমি হাজির। তখন হুজুর (সঃ) বললেন, যে ব্যক্তি বলবে আল্লাহ ছাড়া কোন ডাস্য নেই সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন হযরত আবুযর (রাঃ বললেন, যদিও সে ব্যভিচার ও চুরি করে হুজুর (সঃ) বললেন, হ্যাঁ যদি ও সে ব্যভিচার ও চুরি করে এভাবে তিনবার। তৃতীয় বারে মহানবী (সঃ) বললেন, যদিও আবুষরের নাসিকা ধুলায় ধুসরিত হয়।
সংক্ষিপ্ত ব্যখ্যা: এ হাদীসের অর্থ হল কেহ দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে যদি একবার এ কালিমাকে পড়ে এবং পরবর্তীতে মৃত্যু পর্যন্ত কাফের ও মুশরেক না হয়। কিন্তু সে ইসলামের অন্য স্তম্ভগুলো আদায় না করে। তবে আমল না করার শাস্তি ভোগের পর সে বেহেশতে প্রবেশ করবে।
নামাজের ইতিহাস:
নামাজ প্রত্যেক যুগের প্রত্যেক উম্মতের উপর ফরজ ছিল। কিন্তু এর রূপরেখা ছিল ভিন্নতর। দেখা গেছে কোন যুগে নামাজ বলতে মধু মোনাজাত বা আল্লাহর কাছে ক্রন্দনকেই বুঝান হত। কোন যুগে নামাজ ছিল একটি রুক করা কোন যুগে নামাজ ছিল শুধু কিয়াম করা। কোন যুগে নামাজ ছিল শুধু সেজদা করা কোন যুগে নামাজ ছিল শুধুমাত্র এক ওয়াক্ত। কোন নবীর উম্মতের জন্য নামাজ ছিল মাত্র দু ওয়াক্ত। যেমন হযরত মুসা (আঃ)-এর উম্মতের জন্য নামাজ ছিল মাত্র দুই ওয়াক্ত আর সর্বশেষ নবীর উম্মতের জন্যই মাত্র পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়েছে। হযরত শাহ্ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেছে দেহলভী (রঃ) বলেন-ইহুদী, খ্রীষ্টান ও অগ্নিপূজকদের ধর্মেও নামাজ ছিল, কিন্তু তারা যে পরিবর্তন করে ফেলেছিল। তা হতে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম রূপে উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য নামাজকে ফরজ করা হয়েছে।
নামাজ কখন ফরজ হল:
নবুওয়াতের দশম বৎসর রজব মাসে মহানবী (সঃ) মিঃ রাজ গমন করেন। মিরাজ হতে প্রত্যাবর্তন কালে ষষ্ঠ আকাশে হযরত মুসা (আঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ হয়। তিনি রাসূল (সঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন ওহে শেষ নবী: আপনি আপনার উম্মতের জন্য কি হাদিয়া নিয়ে যাচ্ছেন? হুজুর (সঃ) বললেন, পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ। হযরত মুসা (আঃ) বললেন, আপনার উম্মতগণ তো প্রত্যহ পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে সক্ষম হবে না। কাজেই আপনি আল্লাহর দরবারে গিয়ে সুপারিশ করুন তিনি যেন নামাজ আর কমিয়ে দেন। হযরত মুসা (আঃ)-এর পরামর্শ অনুযায়ী রাসূল (সঃ) আল্লাহর দরবারে গিয়ে
নামাজ হ্রাসের জন্য আবেদন করলেন। আল্লাহ তায়ালা তখন পঞ্চাশ ওয়াক্তের জায়গায় পাঁচ ওয়াক্ত বানিয়ে দিলেন, এবং বললেন যারা প্রত্যহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে তাদের আমল নামায় পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজের ছওয়াব প্রদান করা হবে। শরহে বেকায়া প্রণেতা বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মিরাজ রজনীতে ফরজ করা হয়েছে তবে মিরাজের পূর্বেও হুজুর (সঃ) সকাল বিকাল দু ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন এবং মেরাজ হয়েছিল হিজরতের আট মাস পূর্বে। আর একথার প্রমাণ কুরআনে কারীমের সে আয়াত থেকে পাওয়া যায়।
পাঁচ ওয়াক্ত নামায কেন নির্ধারণ করা হল:
ফজর, জোহর, আছর ঈশা মাগরিব মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এভাবে সুবিন্যস্ত করার কারণ হল আদিপিতা হযরত আদম (আঃ) যখন বেহেশত হতে দুনিয়ায় নিক্ষিপ্ত হন তখন ছিল অন্ধকার রজনী। তিনি সারা রাত কেঁদে কেঁদে কাটালেন। যখন তিনি সুবহে সাদিকের শুভ্র আভা দেখতে পেলেন, তখন তিনি খুশিতে বিভোর হয়ে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জানাতে দু'রাকাত নামাজ আদায় করলেন। আর এ কারণেই আল্লাহ্ তায়ালা উম্মতে মুহাম্মাদীয়ার উপর ফজরের নামাজ ফরজ করেছেন।
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) স্বীয় পুত্র ঈসমাইল (আঃ)-কে যখন কুরবানী করতে নিয়ে যান, তখন স্বীয় মনোবল অটুট রাখার জন্য এক রাকাত এবং পুত্র-স্নেহে স্বীয় হৃদয় হতে দূরীভূত করার জন্য এক রাকাত এবং হযরত ইসমাঈল (আঃ) আল্লাহর রাহে কুরবান হতে প্রস্তুত থাকার জন্য এক রাকাত এবং হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর পরিবর্তে দুম্বা কুরবানী হয়ে যাবার কারণে এক রাকাত মোট চার রাকাত দ্বিপ্রহরের সময় আদায় করেছিলেন। তাই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য জোহরের নামাজকে ফরজ করে দিয়েছেন। হযরত ইউনুস (আঃ) মাছের পেট থেকে মুক্ত হয়ে সূর্য অস্ত যাওয়ার কিছুক্ষণ পূর্বে চার রাকাত নামাজ আদায় করেন। আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা ও স্বীয় অপরাধ মোচনের জন্য তিনি এ নামাজ আদায় করেন। তাই আল্লাহ তায়ালা উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য এ চার রাকাত আছরের নামাজ ফরজ করে দিয়েছেন। কেউ কেউ বলেন, হযরত সোলায়মান (আঃ) স্বীয় রাজত্ব এ সময় ফিরে পেয়ে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের জন্য চার রাকাত নামাজ আদায় করেন আর এটাই হল আছরের নামাজ। হযরত ঈসা (আঃ) খোদার বেটা না হওয়ার জন্য এক রাকাত, তার মা খোদার স্ত্রী না হওয়ার জন্য এক রাকাত এবং আল্লাহকেই একমাত্র খোদা বলে স্বীকার করে নেয়ার জন্য এক রাকাত মোট তিন রাকাত নামাজ আদায় করেন। আর এ তিন রাকাত নামাজকে উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য মাগরিব হিসেবে ফরজ করা হয়েছে।
হযরত মুসা (আঃ) বনী ইসরাইলকে নিয়ে ফেরাউনের বন্দীশালা হতে মুক্তি লাভের পর তীহ্ ময়দানে পৌঁছে রাতের অন্ধকারে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য চার রাকাত নামাজ আদায় করেন আর এ চার রাকাত নামাজকেই উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য ঈশার নামাজ রূপে ফরজ করা হয়েছে। নবী করীম (সঃ) শবে মিরাজে গমন কালে হযরত মুসা (আঃ)-এর সাথে ষষ্ঠ আকাশে সাক্ষাৎ হলে তিনি তাঁকে তার জন্য সিদরাতুল মুনতাহায় গিয়ে এক রাকাত নামাজ আদায় করার জন্য অনুরোধ করেন তাই রাসূল (সঃ) তথায় পৌঁছে নিজের জন্য এক রাকাত ও হযরত মুসা (আঃ) এর জন্য এক রাকাত ও আল্লাহর নির্দেশে এক রাকাত মোট তিন রাকাত বিতিরের নামাজ রূপে ওয়াজিব করা হয়েছে।
পাবলিশার অর্গানাইজেশন সিয়াম হাসান নিউজ লিমিটেড