(toc)
নর-নারীর বিবাহের বয়স:
সর-নারীর বিয়ের বয়স ৩০ ওয়ার পর বিবাহ সম্পর্কিত দিয়ম কানুনগুলো যা ইসলামী সমত সেই সম্পর্কে জান অর্জন করা অবশ্যই উচিত। কোন বয়সে কি নিয়মে বিবাহ করতে হবে তাহর পূর্ণ আন থাকা দরকার। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন,জার ভরণপোষণ করার মত সম্পদ উপার্জন করার যোগ্যতা যার না থাকে তার বিবাহ করা উচিত নই। অন্য আর একটি হারাস আছে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, হে সব সম্প্রদায়। তোমাদের মধ্যে যাহারা বিয়ে করতে সক্ষম, তারা বিয়ে করবে এবং যারা বিয়ে করতে সক্ষম নয় তারা চোয়া রাখবে। তিনি আরও বলেছেন, বিবাহ করা আমার সুন্নত। যে ব্যক্তি এই কাজ হতে ইচ্ছা করে ফিরে থাকতে সে ব্যক্তি আমার সুন্নত হতে মুখ ফিরিয়ে রাখল। বিবাহ করা যে একান্ত প্রয়োজন তা উপরের হাদীস কয়টি হতে বোঝা যায়। তবে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কারও জন্যে বিয়ে করা ওয়াজিব, কারও জন্য সুন্নাত আবার কারও জন্য মোস্তাহাব। আবার কারও জণ্য বিয়ে একেবারে নিষিদ্ধ। বিবাহের জন্য প্রয়োজন হল আর্থিক স্বচ্ছলতা এবং শারীরিক শক্তি। শারীরিক শক্তি বলতে সাধারণত যৌন শক্তিকে বোঝায়। যাদের আর্থিক পতি এবং যৌন শক্তি কোনটাই নাই তাহাদের জন্য বিয়ে করা সম্পূর্ণ নিষেধ। যাসের শুধু আর্থিক অবস্থা ভাল কিন্তু যৌন শক্তি নাই তাসের জন্য বিয়ে করা নিষেধ। কারণ বিয়েতে যৌন শক্তি আসল উপাদান। যৌন শক্তি না থাকলে সারী তার কাছে কেন বিয়ে বসব্যে আর যাদের শুধু যৌন-শক্তি আছে, আর্থিক অবস্থা ভাল না তাদের জন্যও বিয়ে করা ঠিক না। কারণ বিয়ে করলে স্ত্রী, সন্তানদের ভরণ-পোষণ করতে পারবে না।
নারী-পুরুষের বিয়ের বয়স সাধারণত তাদের সাবালকত্বের উপর নির্ভর করে। যে যুবকের বয়স আঠার বছর হয়েছে এবং তার উত্তেজনা শতি বোঝা যায় তার দিয়েব বয়স হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। আর যে মেয়ের মাসিক ঋতু আরম্ভ হয়েছে, সে মেয়েও বিয়ের উপযুক্ত হয়েছে বলে ধরতে হবে। তবে ছোট, বয়সে বিয়ে দেওয়া ঠিক না। হযরত ইমাম আযম আবু হানীফা (রহঃ) বলেছেন, অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক কন্যাকে বিয়ে দেওয়া যায় কিন্তু তাকে দাম্পত্য জীবনযাপন এবং পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। যতক্ষণ না সে এই কাজের উপযোগী হয়। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সব প্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ে করেছিলেন। শুধুমাত্র হযরত আয়েশা (রাঃ) অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন। যখন সে প্রাপ্ত বয়স্কা হলেন তখনই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর খেদমতের জন্য প্রস্তুত হলেন। হযরত আলী (রাঃ)-এর সাথে নবীকন্যা ফাতিমা (রঃ)-এর বিবাহ হয়েছিল যখন নবীকন্যার বয়স পনের বছর এবং হযরত আলী (রাঃ)-এর বয়স ছিল একুশ বছর। সাধারণত পুরষের জন্য পঁচিশ বছর বয়সে বিবাহ করা আর মেয়েদের জন্য তার কিছু কম বয়সে ১৫/২০ বছরের মধ্যে বিয়ে দেওয়া উচিত।
অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে হলে নারীদের সন্তান জন্মের আগেই স্বাস্থ্য ভেঙ্গে যায়। সংসারের কাজকর্ম করতে দুর্বলতা অনুভব করে। এতে সংসারে বিশৃংখলা শুরু হয়ে যায়। আর অপ্রাপ্ত বয়ন্ত ছেলেরা বিয়ে করলে যৌবনের তাড়নায় অতিরিক্ত সহবাস করতে থাকে ফলে অল্প সময়ের মধ্যে তারাও দুর্বল হয়ে পরে। এতে কর্মক্ষমতা লোপ পায়। সংসারে অনটন দেখা দেয়। কাজেই উপযুক্ত বয়সে ছেলে এবং মেয়েদের বিবাহ দেওয়া উচিত।
বিয়ের উপকারিতা:
বিয়ের মাধ্যমে মানুষ দুনিয়াতে সুখ-শান্তি লাভ করতে পারে। সুখের একটি সংসার গড়তে পারে। বিয়ে করার ফলে বাজে চিন্তা হতে মন বিদূরিত হয়ে একমাত্র আল্লাহর ইবাদতে মন দেওয়া যায়। আর এই বিয়ের দ্বারা আল্লাহর সৃষ্টি বৃদ্ধি পেতে থাকে। অবিবাহিত নারী পুরুষের বিরাশি রাকাআত নামায অপেক্ষা বিবাহিত নারী পুরুষের দুই রাকাআত নামায শ্রেয়। হযরত মুহাম্মদ (1ঃ) বলেছেন, আল্লাহর বান্দা যখন বিয়ে করল সে তাহার জীবনকে অর্ধেক পরিপূর্ণ করল। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আরও বলেছেন, বিয়ের দ্বারা স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের ভিতরে যেরূপ ভালবাসার সৃষ্টি হয় অন্য কোন উপায়ে তা হয় না। অন্য একটি হাদীসে আছে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা'আলাকে ভয় করার পরে কোন মুমিন বান্দা সতী স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোন কিছুর মাধ্যমেই এত বেশি উপকৃত হতে হতে পারে না যদি সেই স্ত্রী তার বাধ্যগত হয়ে চলে।
প্রত্যেক মুসলিম নারী পুরুষের বিয়ে করা একান্ত কর্তব্য তা উপরের হাদীসগুলো থেকে বোঝা যায়। বিয়ের মাধ্যমেই দুনিয়ার জীবন ধর্মীয় নিয়মের ভিতরে আনা যায়। বিয়ের দ্বারা কুপ্রবৃত্তি থেকে নিবরাণ থাকা যায়। বিয়ের দ্বারা মানুষ হারাম সমস্ত জিনিস হতে বেঁচে থাকতে পারে। বিয়ের দ্বারা মানুষের যৌন চাহিদা মিটানো সম্ভব হয়। বিয়ে করলে ব্যভিচারের দিকে মন অগ্রসর হয় না, কারণ যার জন্যে সে ব্যভিচার করার চিন্তা করবে তাতো তার ঘরেই আছে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, যখন তোমাদের মন অন্য স্ত্রীলোকের দিকে যায়, তখন তোমরা ঘরে যাও এবং স্ত্রীর সাথে মেলামেশা কর এতে মনের তৃপ্তি মিটবে।
গান
মানুষের জন্য বিয়েতে পাঁচটি উপকার রয়েছে। বিয়ে যারা করে না তারা ঐসকল উপকারগুলি হতে বঞ্চিত হয়।
১. সন্তান লাভ করা
২. যৌন উত্তেজনা প্রশমিত করা
৩. ঘর-সংসার রক্ষা করা
৪. বংশ বৃদ্ধি করা ও উহ্য রক্ষা করা
৫. সন্তান ও স্ত্রীর জন্য আহার যোগার করতে যেয়ে প্রবৃত্তির সহিত যুদ্ধ করা। আবার কেউ কেউ বলেছেন, বিবাহের দ্বারা মানুষের জীবনে কয়েকটি উপকার হয়ে থাকে।
১. আল্লাহর বান্দা সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
২. হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উময়ের সংক্ষা বৃদ্ধি পায়।
৩. নারী-পুরুষ ব্যাভিচার হতে বেঁচে থাকতে পারে ৪. নারী-পুরুষের জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
৫. চরিত্রবান সন্তান লাভ হয়।
৬. অবৈধ উপায়ে সন্তান জন্য বন্ধু হয়।
৭. আল্লাহও তাঁর হাবীবের সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।
নারী পুরুষকে অনেক কল্যাণের জন্যই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হয়। যে সমস্ত যুবক-যুবতী বিয়েতে রাজি থাকে না, তাদের জীবনে শান্তির পরিবর্তে অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে। অবিবাহিত অবস্থায় থাকলে চরিত্র ঋাংস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চরিত্রকে ভাল রাখতে হলে বিয়ে করতে হবে।
বিয়ের দ্বারা নারী-পুরুষের যৌন লালসা পূরণের মাধ্যম হয়ে যায়। বিয়ের দ্বারা মানুষকে জীবনে বেহেশতী সুখ নেমে আসে। বিয়ের মানুষ ধর্মিক হওয়ার পথে অগ্রসর হয়। বিয়ে মানুষের জীবনকে পূর্ণতা দান করে। কারণ একটি পুরুষ ও একটি নারী মিলে হয় একটি মন। বিয়ে না করলে পুরুষ ও অর্ধেক থাকে আর নারীও অর্ধেক থাকে। নারী-পুরুষ বিয়ে করলে একটি সুখী পরিবার গঠন হয় এবং সন্তান সন্তুতি দ্বারা আল্লাহর সৃষ্টিকে রক্ষা করা হয়।
বিয়ে না করিলে কি অসুবিধা হয়:
বিয়ের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও যারা বিয়ে করে না তাদের জীবনে সুখ শান্তি আসতে পারে না। অরণ তারা আল্লাহ পাকের নিয়মের বহির্ভূত কাজ করছে। এতে তারা মহান আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সাঃ)-এর আদেশ না মানার গোনাহে লিপ্ত হয়। আল্লাহ তা'আলার মহান উদ্দেশ্যে মানব জাতি-সৃষ্টি করেছেন। সে উদ্দেশ্য বাঁধা প্রাপ্ত হয়। বিয়ের উপযুক্ত অথচ বিয়ে করছেন এমন নারী-পুরুষের প্রতি আল্লাহ পাকের অভিশাপ বর্ষিত হয়। বিয়ে না করলে সে তাকওয়ার অধিকারী হতে পারে না। বিবাহ একটি বড় ইবাদত। কাজেই উপযুক্ত হলেই নারী-পুরুষের বিয়ে করা প্রয়োজন। কোন সময় শয়তান কুমন্ত্রনা দিয়ে ব্যভিচারের দিকে নিয়ে যাবে টেরও পাবে না।
যারা বিয়ে করে না তারা দাম্পত্য জীবনের যে সুখ তা অনুভব করতে পারে না। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, যারা স্ত্রী ও সন্তান লালন পালনের ভয়ে বিয়ে করে না, তারা আমার উম্মতের মধ্যে শামিল হবে না। আর যারা বিয়ে করবে তারা আল্লাহর রহমত লাভ করবে। কাজেই যারা বিয়ে করবে তারা আল্লাহর রহমতে সুখে-শান্তিতে থাকতে পারবে। বিয়ে ছাড়া কোন যুবক যুবতীই আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে পারে না।
অবিবাহিত নারী পুরুষ যতই আল্লাহর আবেদ হউক না কেন, যে কোন সময় শয়তান তাদেরকে চরিত্রহীন করে দিতে পারে। আর চরিত্রহীন হলে ঈমান থাকে না। সাধারণত অবিবাহিত যুবক-যুবতীগণই বেশি ব্যভিচারী হয়ে থাকে। যুবক-যুবতীরা পরস্পরে মিলিত হয়ে খারাপ কাজে লিপ্ত হয়। বিবাহিতদের মধ্যেও চরিত্রহীন আছে তবে খুব কম সংখ্যক। যার জন্য চরিত্রহীন হবে সে বস্তুতো বিবাহিত পুরুষের ঘরের মধ্যেই আছে। মন একটু খারাপ হলেই স্ত্রীর কাছে আসতে পারবে আর তার খায়েশ পূরণ করতে পারবে।
আল্লাহ তা'আলার স্বপ্নের সেরা হল মানুষ। ভাজেই যত আইন কানুন সব আানুষের জন্য। আর মানুষ আল্লাহ পাকের দেয়া আইন-কানুন অনুসারে জীবন পরিচালিত করবে। গ্রানুষ বিবাহ না করলে পশুর স্তরে নেমে যেতে পারে। পশুদের কোন আইন-কানুন নেই। মানুষ চরিত্রহীন হলে পশুর মত যেখানে সেখানে যৌন বাসনা পূরণ করতে চেষ্টা করবে। কিন্তু যেহেতু মানুষ আল্লাহর প্রিয় বান্দ্য কাজেই তারা চরিত্রহীন হতে পারে না এবং পশুর স্বভাব মানুষের ভিতর আনতে পারে না। তবুও কিছু কিছু যুবক-যুবতী যৌন উত্তেজনায় অস্থির হয়ে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু তারা যদি বিবাহিত হইতো তবে তাদের স্ত্রীর কাছে যেয়ে যৌন তৃপ্তি লাভ করত । বিবাহিত জীবনই মানুষকে কর্মঠ ও মুত্তাকী বানাইয়া দেয়। সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করতে শিক্ষা দেয়। আর জীবনে সর্বস্তরে মায়া-মমতা ও ভালবাসার অনাবিল আদন্দ দান করে থাকে। সন্তান লাভ করে চিরসুখময় জীবনযাপন করতে থাকে। তাদের বংশবৃদ্ধি হয়ে কিয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকবে।
কোন কোন অবিবাহিত মানুষ চরিত্রবান হয়েও মুত্তাকী হয়েও, শেষ মুহূর্তে শয়তানের প্রলোভনে পরে সারা জীবনের সাধনার সম্পদ ধ্বংস করে দেয়। অনেক যুবক-যুবতী ছেলেমেয়েদের দেখা যায় তারা চরিত্রহীন হয়ে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে অবৈধ সন্তান গর্ভে ধারণ করে, ফলে আত্মহত্যা ছাড়া তাদের আর কোন পথ খোলা থাকে না; কাজেই প্রত্যেক যুবক-যুবতীর উচিত আল্লাহ এবং রাসূলের বিধান মতে বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হওয়া।
বিবাহ প্রথা:
এই দুনিয়াতে ইসলাম সর্বপ্রথম ও সর্বশেষ ধর্ম। এই ধর্মে কোন পেশাগত ফের্কা নাই। হিন্দু ধর্মে ব্রাহ্মণ ছাড়া, খৃষ্টানদের মধ্যে পাদরী ছাড়া এবং অন্যান্য ধর্মের মধ্যে তাদের ধর্মীয় পুরোহিত ছাড়া বিবাহ, তালাক, অন্যান্য সমাস্যাবলীর সমাধান দিতে পারে না। কিন্তু ইসলাম ধর্মে এসব নিরর্থক নিয়ম নেই। ইসলাম ধর্মে প্রত্যেক লোক ইমাম বা নেতা হতে পারে। প্রত্যেক ব্যক্তি ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত সমস্যার সমাধান দিতে পারে। বিবাহ বন্ধনের অবস্থা তেমন। ইসলামে বিয়ে অত্যন্ত সাদাসিদে প্রথা। স্ত্রী-পুরুষ উপযুক্ত বয়সের হলেই দুই সাক্ষীর উপস্থিতিতে পরস্পর একে অপরকে যদি বলে যে, আমি তোমাকে বিবাহ করলাম আর দ্বিতীয়জন যদি বলে যে আমি রাজি আছি এই অবস্থায় তাহাদের বিয়ে হয়ে গেল। স্ত্রী-পুরুষ অপ্রাপ্ত বয়স্ক হলে তাদের ওলীগণ দুই জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে উপরের শব্দগুলো উচ্চারণ করলে তাদের সাক্ষ্য হতে বিয়ে হয়ে যাবে। কাজী বা খোতবা পাঠের প্রয়োজন পরে না তবে, কাজী সাহেব যদি কোরআন হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবাহ পড়ান এবং খোতবা পাঠ করেন তবে তাহা আরও অতি উত্তম হবে।
বিবাহের অর্থ:
আরবীতে নিকাহ শব্দের বাংলা অর্থ হইল বিবাহ। নিকাহের অভিধানিক অর্থ হলো একত্রিত হওয়া। মিলেমিশে থাকা। শরীয়তের পরিভাষায় নিকাহ হলো স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক মিলন অথবা বৈবাহিক চুক্তি। যেহেতু নিকাহ দ্বারা দুটি বংশ একত্রিত হয়। কোন কোন আলেমের মতে নিকাহের কর্ম যদি বেগানা স্ত্রীলোক হয় তবে তখন নিকাহের অর্থ আকদে নিকাহ বা বৈবাহিক চুক্তি হইবে আর যে স্থানে স্বামী-স্ত্রী হয় সেখানে অর্থ হবে স্বামী-স্ত্রীর মিলন।
বৈবাহিক চুক্তি:
ইসলামের দৃষ্টিতে বৈবাহিক চুক্তি হচ্ছে একটি অঙ্গীকারমূলক চুক্তি। দুই-জন স্বাধীন স্ত্রী-পুরুষের পারস্পরিক সম্মতিজ্ঞানে চুক্তি। যাহাতে স্ত্রী-পুরুষ উভয়ই এই চুক্তি অনুযায়ী দাম্পত্য জীবনযাপন করতে পারে। কোরআন এই অঙ্গীকার চুক্তিকে বড় অঙ্গীকার বলে আখ্যায়িত করেছে ।। অন্যত্র এই ধরণের চুক্তিকে আরদ বা বন্ধন বলা হয়েছে। আসলে বিবাহ চুক্তি হলো এক নেহায়েত মজবৃত গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি। ইহাতে সামান্য অবহেলা করলে যা ফুল-ভ্রান্তি ও খারাপের লেশ থেকে গেলে ভবিষ্যত ফল অতি মারাত্মক ক্ষতিকর এবং ইহার পরিণতি অতি ভয়াবহ ও সুদুর প্রসারী হয়ে দাঁড়ায়। কাজেই ভালরূপে ভেষে চিন্তে এই বৈবাহিক যখন চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া প্রত্যেক মুসলমান নারী পুরুষের কর্তব্য। বিদাই এজন সর্বাস্থায় সমান সমান দুই পক্ষের মধ্যে স্থাপিত হইতে হবে। এই জন্যেই উভয় পাত্র-পাত্রীর বালেগ ইওয়া একান্ত প্রয়োজন। উভয়ের যোগ্যতা ও জ্ঞান এই পরিমাণ হতে হবে যে তাহারা যেন বিবাহের লক্ষ্য ও মূলতত্ত্ব সম্পর্কে অবগত থাকে। কোরআন পাকে এই পারস্পরিক চুক্তিকে এহসান বলা হয়েছে। বিবাহ দ্বারা আবদ্ধ পুরুষ হলো মুহসিন আর স্ত্রী হলো মুহসিনা। মোট কথা, বিবাহ বন্ধনের দ্বারা স্ত্রী-পুরুষ পরস্পরে শক্তিশালী দুর্গে আবদ্ধ হয়ে যায়। তাহারা নফস ও শয়তানের প্ররোচনা হতে নিজেদের ধর্ম ও আখলাক এবং যৌন উত্তেজনাকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। এখন জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে একে অপরের সংগী হয়ে থাকতে হবে। নিজের অন্তর, মন, দৃষ্টি, নজর সম্পূর্ণ আয়ত্বাধীন করতে হবে। কুদৃষ্টি, বেহায়াপনা আচরণ থেকে সংযত থাকতে হবে। একে অপরকে সারা জীবনের সঙ্গী হিসেবে মেনে নিতে হবে হাসিমুখে। উভয়েই উভয়ের সুখের সাথী, দুঃখের সাথী। বিপদ আপদের সাথী হিসেবে জীবনযাপন করতে হবে। বিবাহের পর হতেই শুরু হয় নতুন যাত্রা পথ। শুরু হয় একত্রে মিলেমিশে জীবন পরিশুদ্ধ ও সংশোধনের তুমুল সংগ্রাম। এই বিয়ের দ্বারাই উভয়ের পরকালীন সুন্দর জীবন শুরু হয়।
বিয়ের ফযিলতসমূহ:
পরম করুণাময় আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, তোমাদের মাঝে যারা অবিবাহিত তাদেরকে বিবাহ দাও এবং তোমাদের অন্তর্গত ঈমানদার দাসদাসীগণকেও। যদি তারা অভাবগ্রস্তা হয় তবে আল্লাহ পাক নিজ অনুগ্রহে তাহাদিগকে অভাব মুক্ত করবেন। দয়াময় আল্লাহ তা'আলা আরও বলেছেন, নিশ্চয়ই আমি আপনার আগে অনেক পয়গাম্বর প্রেরণ করেছি এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করেছি।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, "হে যুবকগণ। তোমাদের মধ্যে যার বিবাহিত জীবনের গুরুভার পালনের ক্ষমতা আছে তাহার বিবাহ করা উচিত।"
বিবাহ করা আমার সুন্নত। যে আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরাইয়া রাখে সে. আমার উত্থত নয়। অবিবাহিত ব্যক্তির সত্তর রাকাআত অপেক্ষা বিবাহিত ব্যক্তির দুই রাকাআত নামায উত্তম।
আমার খুব পছন্দনীয় এই দুনিয়ায় তিনটি জিনিস-
১। সুগন্ধি দ্রব্য
২। স্ত্রীলোক
৩। নামায।
ইহাতে আমার চোখ শীতল হয়।
কোন বাক্তি যখন তার স্ত্রীর দিকে এবং স্ত্রী তার স্বামীর দিকে ভালবাসার দৃষ্টিতে তাকায় তখন আল্লাহ তা'আলা সেই স্বামী-স্ত্রীর দিকে রহমতের দৃষ্টিপাত করেন।
উপরে বর্ণিত পরিদ্র কোরআনের আয়াত ও হাদীসের আলোকে বোঝা যায়, বিবাহ খুব প্রয়োজন এবং এটা আল্লাহ এবং তার নবী (সাঃ)-এর নির্দেশ। বিবাহ বন্ধন থেকে নবী (আঃ) গণ বিরত ছিলেন না। বিবাহিত জীবনে পূণ্যের ভাগ বেশি হয়। এই বিবাহ আল্লাহ পাকের অতি বড় নেয়ামত। ইহাতে আল্লাহর রহমত করুণা বর্ষিত হয়।
বিবাহ করা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর আদেশ মান্য করা। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে তাঁর উম্মতের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় যাহাতে তিনি কিয়ামতের ময়দানে নিজের উম্মতের অধিক সংখ্যা নিয়ে অন্যান্য নবী-রাসূলগণের উপর গর্ববোধ করতে পারেন।
হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন, যে মেয়েলোক সন্তান প্রসব করে ও তাকে ভালবাসে সেই মেয়েলোক বিয়ে কর। যেহেতু আমি তোমাদের আধিক্যবশত গর্ব করিব। এই জন্যে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বন্ধ্যা স্ত্রীলোকদের বিয়ে করতে নিষেধ করেছেন। কোন না বন্ধ্যা স্ত্রীলোকের সন্তান ধারণের ক্ষমতা নেই। তিনি আরও বলেন, ঘরে খেজুরের চাটাইর বিছানা থাকলে তা বন্ধ্যা স্ত্রীলোক হতে ভাল। তিনি আরও বলেন, যে স্ত্রীলোক সন্তান প্রসব করে কুৎসিত হলেও 'সে ঐ সুন্দরী রমণী হতে ভাল যে সন্তান প্রসব করেনা।
বিবাহ বন্ধনের দ্বারা যে সব সন্তান জন্মগ্রহণ করে তাদের দোয়া লাভ করা যায়। হাদীসে বর্ণনা করা আছে, যে সব ভাল কাজের সওয়াব মানুষের মৃত্যুর পরেও বন্ধ হয় না মৃত্যুর পরেও জারী থাকে উহাদের মধ্যে সন্তানও একটি। পিতামাতার মৃত্যুর পরে সন্তানের দোয়া সবসময় আল্লাহ পাকের কাছে পৌঁছে থাকে। হাদীসে আরও উল্লেখ আছে, সন্তানের দোয়াকে নূরের তবকে রেখে মৃত পিতামাতার সামনে রাখা হয় তাহা দেখে তাদের চোখ শীতল হয়।
বিয়ের ইসলামী নিয়ম:
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তির সংগতি আছে, অর্থাৎ এই পরিমাণ সম্পদ আছে যে, তা দ্বারা স্ত্রী পুত্রের ভরণ পোষণ করতে পারে তার বিবাহ করা কর্তব্য। আর যে ব্যক্তি সংগতি সম্পন্ন নয় তার রোযা রাখা উচিত। এই রোযা দ্বারা তার যৌন উত্তেজনা দমন থাকবে। মধ্যবর্তী অবস্থায় অর্থাৎ যৌন উত্তেজনা বেশী প্রবল নয়, আর পুরুষত্বহীনও নয় এবং স্ত্রীর মোহরানা আদায়ে ও ভরণ পোষণের সকল খরচ বহনের সামর্থ থাকে তার বিবাহ করা সুন্নতে মোয়াক্কাদাহ। বিবাহ করবে না বলে জিদ করা গুনাহের কাজ। হারাম কাজ হতে আত্মরক্ষা করা সুন্নতের অনুসরণ করা, শরীয়তের নির্দেশ পালন অথবা সন্তান লাভের উদ্দেশ্য থাকলে সওয়াব পাওয়া যাবে। আর যদি শুধু সুখ ভোগের বা যৌন উত্তেজনা দমনের জন্য বিবাহ করে তবে কোন সওয়াব পাবে না। যদি যৌন উত্তেজনা প্রবল হয় যে বিবাহ না করলে জ্বিনা ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আশংকা দেখা দেয়। স্ত্রীর মোহরানা ও ভরণপোষণে সামর্থ আছে এমন অবস্থায় বিবাহ করা ওয়াজিব। নারীর প্রতি দৃষ্টি পড়লে উহার অনুভূতি না হলে অথবা হাতের দ্বারা স্পর্শ করলেও উত্তেজনা হয় না এমন অবস্থায়ও বিবাহ করা ওয়াজিব। যদি ধারণা হয় যে, বিবাহ না করলে ব্যভিচার ঘটে যাবে তবে তাহার জন্য তখন বিবাহ করা ফরজ হয়ে যায়। যদি আংশকা হয় যে, বিবাহ করলে স্ত্রীর ভরণপোষণ করতে পারবে না অথবা বিবাহ সম্পর্কিত যেসব জরুরী বিষয় আছে তাহা পূরণ করতে পারবে না তবে এই অবস্থায় বিবাহ করা মাকরূহ। আর যদি এসব বিষয় সম্বন্ধে মনে প্রবল বিশ্বাস হয় তবে বিবাহ করা হারাম।
কি কি গুণ থাকা উচিত পাত্রের মাঝে:
পিতা বা অভিভাবক তার মেয়ের বিবাহিত জীবনের মঙ্গলের দিকে খেয়াল রাখিয়া। চিন্তা-ভাবনা করে একজন সৎ চরিত্রবান ছেলে নির্বাচন করবে। ভদ্র ও উত্তম স্বভাব চরিত্র বিশিষ্ট পাত্রের হাতে মেয়ে বিবাহ দিবে। অসভ্য, কড়া মেজাজ, রুক্ষ স্বভাব ও কুশ্রী এই ধরনের পাত্র নির্বাচন করা ঠিক না। যে পুরুষ স্ত্রীর ভরণপোষণ করতে অক্ষম তাহার সহিত মেয়ের বিবাহ দেওয়া উচিত হবে না। বংশের মর্যাদা, আর্থিক অবস্থা ও ধর্মকর্মে অনুরাগ এই কয়েকটি বিষয়ে মেয়ের সমান না হলে সেখানে মেয়ের বিবাহ দেওয়া ঠিক হবে না। জ্বিনাকার, ব্যভিচারী, ফাসেক পাত্রের সহিত মেয়ের বিবাহ দেওয়া উচিত নয়। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আপন স্নেহের কন্যাকে পাপাচারী ও জ্বিনাকারের সাথে বিয়ে দেয় সে কন্যার সহিত স্নেহ বন্ধন ছিন্ন করে দিল। তিনি আরও বলেন, বিবাহ বন্ধনকে অন্য প্রকারে দাসত্ব বলা যায়। সাবধান; প্রিয় প্রাণাধিক কন্যাকে কাহার দাসী করে তুলিতেছ।
পাবলিশের অর্গানাইজেশন সিয়াম হাসান নিউস লিমিটেড