পাত্র পাত্রী পরস্পর দেখা সুন্নত:
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, যখন আল্লাহ পাক কোন লোকের অন্তরে কোন নারীকে বিবাহ করার আশা ঢেলে দেন তখন তাহার হাত ও মুখ দেখে লও। কারণ এই দুটি অংগ বেশি দেখার উপযোগী। যেহেতু উহাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালবাসা সৃষ্টি করে। হযরত মুনীরা বিন শোবা হযরত হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নিকট তার নিজের বিবাহের প্রস্তাব করেন। তখন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বললেন, পাত্রীটি দেখে লও। কেন না উহা তোমাদের মধ্যে স্থায়ী মহব্বত জন্মানোর প্রধান উপায়।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আরও বলেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন স্ত্রীর প্রার্থী হয় তারপর যদি ঐ জিনিসকে দেখতে পারে যাহা বিবাহের ইচ্ছাকে বৃদ্ধি করে তবে দেখে নিবে। তারপর হযরত জাবের (রাঃ) বলেছেন, আমি কোন রমণীকে বিবাহ করার ইচ্ছা করেছিলাম। তারপর আমি তাহার বাড়ীর পাশে লুকাইয়া ছিলাম এবং এই রমণীকে ঐ খেয়ালে দেখিলাম যাহাতে তাহার বিবাহের আশা আমার দিকে প্রকট হয়ে উঠে।
পাত্রী না দেখে বিবাহ করলে পরে চিন্তা, দুঃখ ও জ্বালা যন্ত্রণা ভোগ করিতে হয়। সুন্দর পুরুষের সাথে কালো কুশ্রি নারীর বিবাহ হওয়া যেমন অসংগত, একজন সুন্দরী নারীর সাথেও কালো কুশ্রী পুরুষের বিবাহ হওয়া উচিত নয়। ইহাতে সুখের সংসার তৈরির ক্ষেত্রে বাঁধার সৃষ্টি হয়। উচ্চ শিক্ষিত পুরুষের সাথে মুর্খ নারীর বিবাহ হওয়া ঠিক না। এতে পরিণামে ফল খুব খারাপ হয়। কাজেই উভয় পক্ষের পিতামাতার এ বিষয়ে খুবই
লক্ষ্য রাখতে হবে এবং বিবেচনার সাথে কাজ করতে হবে। পাত্র-পাত্রীর স্বভাব চরিত্র, মেজাজ, তবীরত, স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য, শারীরিক গঠন প্রভৃতির সামঞ্জস্য বিবেচনা করে বিবাহের সমতা রক্ষা করতে হবে। এই অবস্থায় গরীব মেয়ের বিবাহ ধনী সন্তানের সাথে হলে ভয়ের কোন কারণ থাকে না।
কি কি গুণ থাকা প্রয়োজন পাত্রীর:
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলিয়াছেন, চারটি গুণের সমষ্টি থাকলে ঐ স্ত্রীলোককে বিবাহ করা যায়। যেমন:
১. বংশ মর্যাদা, তা একটি বিবেচনার বিষয় কারণ ভদ্র ঘরের সন্তান ভদ্র হয়ে থাকে। আর অভদ্র ঘরের সন্তান অভদ্র হয়ে থাকে।
২. রূপ সৌন্দর্য, স্ত্রী সন্দর সুশ্রী হলে স্বামীর মনে ভালবাসা ও মহব্বত পয়দা হওয়ার কারণ হয়। তাই বিয়ের আগে মেয়েকে দেখা সুন্নত। তাতে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে গভীর ভালবাসা পয়দা হয়। পরবর্তীতে কোন অসুবিধা হবার কারণ থাকে না।
৩. ধন-দৌলত, পাত্রীর নিজের বা তার পিতা-মাতার অর্থ সম্পদ থাকা তার একটি গুণ।
৪. ঈমানদার, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, তোমরা দ্বীনদার সতী স্ত্রীলোককে বিবাহ কর।
ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) বলেছেন, বিবাহের আগে পাত্রীর মাঝে আটটি গুণ খোঁজ করা দরকার।
যেমন:
১. পবিত্রতা ও বিশ্বস্ততা
২, সৎ স্বভাব মিষ্ট ভাষিণী হওয়া
৩. রূপ ও গুণ থাকা
৪. মোহরানা কম হওয়া
৫. স্ত্রীলোক বন্ধ্যা না হওয়া
৬. কুমারী হওয়া
৭. ধর্মের এবং পরহেজগারীর দিবা দিয়ে উচ্চ হওয়া।
৮. নিকট সম্পর্কের আত্মীয় না হওয়া।
পাত্র-পাত্রী নির্বাচন কেমন হওয়া উচিত: বিবাহ ব্যবস্থা একটি স্থায়ী সম্পর্ক হবার মাধ্যম। সেজন্য যেভাবে সম্পর্কটি নিখুঁত ও সুন্দর হয় এবং টিকিয়া থাকতে পারে সে দিকে পাত্র-পাত্রীর অভিভাবকগণের আগে থেকেই লক্ষ্য রাখা উচিত। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন
,تَخَيرُوا لِنُطْفَكُمْ فَلكَ السَّمَاءُ يَلِدْنَ أَشْبَاهُ إِخْوَانِهِنَّواخوانهن
উচ্চারণ : তা খাইয়্যাক্ত লিনুত্ব ফিকুম ফাইন্নান্নিসায়া ইয়ালিদনা আশবাহা ইখওয়াতি হিন্না ওয়া আখওয়াতিহিন্না।
অনুবাদঃ তোমরা বীর্যপাতের জন্য উত্তম স্থান পছন্দ করিও। যেহেতু স্ত্রীলোকেরা (অনেক সময়) নিজ নিজ ভাই বোনদের মত সন্তান প্রসব করে থাকে।
সন্তানদের উপর মায়ের বংশের স্বভাব-চরিত্র ও আকৃতি-প্রকৃতির ছাপ পড়ে। মায়ের স্বভাব চরিত্রই বিশেষ করে সন্তান-সন্তুতির মধ্যে দেখা যায়। কোন সন্তানের স্বভাব তার খালার মত, কোন সন্তানের স্বভাব তার মামার মত হয়ে থাকে। যে বংশে বহু জ্ঞানী, বিদ্যান, আলেম, ধার্মিক, সম্মানি লোক থাকে সেই বংশ ভাল। খারাপ বংশের মাতা হতে উঁচু ও সৎ স্বভাবের সন্তান আশা করা যায় না। কাজেই বিবাহের পূর্বে পাত্রীর বংশীয় মর্যাদা এবং তার মাতাপিতা, ভাইবোনদের স্বভাব-চরিত্রের খোঁজ-খবর নেওয়া অতি প্রয়োজনীয় কাজ। আবার স্বাস্থ্য, বয়স, আচার-ব্যবহার, শিক্ষা-দীক্ষা সামাজিক মর্যাদা, পারিবারিক অবস্থা, দেহের গঠন ও সৌন্দর্য সম্বন্ধে বিশেষ ভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।
স্বাস্থ্যবান পুরুষের সাথে স্বাস্থ্যহীন নারীর বিবাহ হওয়া যেমন অনুচিত, আবার স্বাস্থ্যবতী নারীর সাথে স্বাস্থ্যহীন পুরুষের বিয়েও অনুচিত। যুবকের সাথে বয়স্ক নারীর বিয়েতে যেমন ক্ষতি হয় আবার যুবতী নারীর সাথে বয়স্ক পুরুষের বিয়েতেও তেমনি ক্ষতি হয়। ইহাতে স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে। কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর বংশের খোজখবর লওয়া একান্ত প্রয়োজন হলো এই কারণে যে, তাহাদের মধ্যে এমন অনেক দোষ, রোগ-ব্যধি থাকতে পারে যা সংক্রামক রোগে পরণত হয়ে সম্পূর্ণ বংশই সংক্রামিত হয়ে পড়ে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, পুরুষ ও কবর আলিঙ্গন ব্যতীত নারীদের আর কোন শ্রেষ্ঠ বস্তু নাই। তিনি আরও বলেছেন, স্ত্রী ছাড়া পুরুষ অভাবগ্রস্থ। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ)। ধন সম্পদ থাকা সত্ত্বেও ৪। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বললেন, হ্যাঁ, স্ত্রী ব্যতীত সম্পদশালী ব্যক্তি অভাবগ্রস্থ। তিনি আরও বললেন, স্বামী ছাড়া নারী দরিদ্র। সাহাবাগণ আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ)। ধন-সম্পদ থাকা সত্ত্বেও। তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, স্বামী ব্যতীত নারী সম্পদশালী হওয়া সত্ত্বেও দরিদ্র। অন্য আরেকটি হাদীসে আছে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন, মুমিন বান্দা সৎচরিত্রবান স্ত্রী মাধ্যমে যতটুকু লাভবান ও উপকৃত হয় ।। অন্য কোন কিছুর মাধ্যমে ততটুকু লাভবান ও উপকৃত হয় না। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আরও বলেছেন, তোমরা এমন নারীকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করবে, যে নারী হবে সতীসাধ্বী ও বেশী সন্তান প্রসবকারিনী। কেননা, ইহাতে আমি কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের সংখ্যা বেশী হবে বলে গর্ববোধ করতে পারব।
পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত:
تنكح المرأة لأربع لِمَا لِهَا وَلِحُسْنِهَا الجَمَالِهَا وَلِلابْنِهَافَاخْتَرْ بِذَاتِ الدِّينَ
উচ্চারণ: তুনকাতুল মারআতা লি আরবায়িল লিমা লিহা ওয়ালি হাসানিহা ওয়ালি জামা লিহা ওয়ালিদীনিহা ফাখতার বিযাতিদ দ্বীনা।
অনুবাদঃ ধন, বংশ সৌন্দর্য ও ধর্ম এই চারটি গুণের কারণেই স্ত্রীলোককে বিবাহ করা হয়। অতএব, তোমরা দ্বীনদার স্ত্রীলোক গ্রহণ কর। হেদায়াতের একটি পন্থা হল বিবাহ। এর জন্য হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বিভিন্ন রকমের
উৎসাহ প্রদান করে মানব জাতিকে বিবাহ দ্বারা স্ত্রী গ্রহণ করতে আগ্রহী করে তুলেছেন, কোন পাত্রীকে গ্রহণ করতে হবে, কোন পাত্রীকে গ্রহণ করতে হবে না। কাকে কার উপর প্রাধান্য দিতে হবে। কোন স্ত্রীলোক অপছন্দনীয় এবং কে পছন্দনীয়। ইহা নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা মতভেদ রয়েছে। কোন কোন লোক বেশিরভাগ সম্পদশালীনি মহিলাকে পছন্দ করে। আর কোন গুণ তার থাকুক বা না থাকুক সেদিকে দেখে না। যার সম্পদ বেশি আছে সেই ভাল মহিলা। জীবন যাপনের প্রয়োজনীয় বৈষয়িক ব্যাপার ও বিবাহ সম্পর্কিত সমস্যাবলী এবং সন্তানের প্রতিপালন প্রভৃতি উপায় উপকরণ সম্বন্ধে যেসব অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় তখন সম্পদশালী স্ত্রীর অর্থ সম্পদ সাহায্য করবে। এবং সকল সমস্যার সমাধান হবে। এমনকি স্বামীর বিরাট আর্থিক উপকারও হবে। কারও মতে উচ্চ বংশের নারীই ভাল এবং সুখ শান্তির মূল। তাহারা উচ্চ অভিজাত বংশকে ভাল মনে করে যেন প্রয়োজনের সময় তার দ্বারা সব ধরনের মুক্তি পাওয়া যায়।
কোন কোন লোক নারীর রূপ সৌন্দর্যকে বেশি পছন্দ করে। সুন্দর সুশ্রী মেয়েকে স্ত্রী হিসাবে পেতে প্রবল আশা মনে পোষণ করে। সুন্দর স্ত্রীর রূপ দর্শন করে সে প্রচুর আনন্দ পায়। আবার কোন কোন লোকের ঈমানদার স্ত্রীলোক পছন্দনীয়। তারা মনে করে সতীসাধ্বী নারী স্ত্রী হিসেবে ভাগ্যে জুটলেই মনের আশা পূরণ হবে। দুনিয়াদারীর সাথে সাথে দ্বীনদারীও বজায় থাকবে। এবং এই ধরনের নারী বিয়ে করে স্ত্রী হিসেবে পেয়ে জীবন সংগীনি করে বংশের মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে। কোন ধরনের বেইজ্জতি দুর্নামের চিন্তা করতে হবে না এবং স্ত্রী কোন নৈতিক খারাপের দিকে অগ্রসর হবে না। স্বামীর উপস্থিতি ও অনুপস্থিতিতে তাহার ইচ্ছা ও সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখবে। মোট কথা দ্বীনদার স্ত্রী দ্বারা দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জিন্দেগী সুখের হয়।
উচ্চ বংশশালী নারীর মাধ্যমে ক্ষয়-ক্ষতি:
খুব উচ্চ বংশশালী নারী তার বংশ মর্যাদার গুণ গরিমা প্রকাশ করতে থাকে স্বামীর উপরে। বংশ গৌরবের মোহে পড়ে স্বামীর মান মর্যাদার দিকে লক্ষ্য রাখে না। যদি স্বামীর সংসারে লোক সংখ্যা বেশি হয় তবে তাহার অভিমানও তীব্র আকার ধারণ করে। কথায় কথায় নিজের বংশের প্রশংসা কীর্তন করে সকলের মন বিষাইয়া তুলে। এমন স্ত্রীর আচার আচরণে দাম্পত্য জীবনের আসল সুখ শান্তি স্বামীর ভাগ্যে জুটে না। সে নিজেকে স্ত্রীর কাছে হেয় ও ছোট করে। তাহার পূর্ণ স্বাধীন চিন্তা থাকে না। জীবনে নেমে আসে অশান্ত ও দুর্ভাবনার অন্ধকার।