ভূমিকা :
মানবদেহের প্রায়ু, শিরা, গ্রন্থি ও যকৃৎকে সুস্থ রেখে দেহকে কর্মক্ষম, কষ্টসহিষ্ণু ও দীর্ঘায়ু করে কর্মতৎপরতা বজায় রাখার জন্য প্রাচীন কালে আমাদের দেশের আর্থ ঋষিরা যে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি আবিষ্কার করেন, তাকে আসন বলা হতো। আধুনিক যুগে এ আসনের প্রয়োগ বৃদ্ধির ফলে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে আসনকে দু'ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর একটি হলো Dhyanasan (ধ্যানাসন) অপরটি হলো Shastyasan (স্বাস্থ্যাসন)।
ধ্যানাসন (Dhyanasan):
যে-সব আসন দ্বারা ধ্যানধারণা, প্রাণায়াম ও যোগের নানাপ্রকার সক্রিয় অভ্যাস করা হয়, সেগুলোকে ধ্যানাসন বলা হয় ধ্যানাসনের কিছু আসন নীচে বর্ণনা করা হলো-
শবাসন (Shabasan):
এ আসন অবস্থানকালে মরা অর্থাৎ শবের মতো নিস্পন্দনভাবে শুয়ে থাকতে হয় বলে এ আসনটির নাম শবাসন। শরী কোনোভাবে পরিশ্রান্ত হলে এ আসনটি বিশ্রাম সুখ লাভের ক্ষেত্রে সর্বোৎকৃষ্ট আসন হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
পদ্ধতি (Process)। মেঝের উপরে প্রথমে কম্বল অথবা নরম তোষক বিছিয়ে নিতে হবে। তারপর তোষকের উপর চিত্রের না চিৎ (lie flat-face up) হয়ে শুয়ে পড়তে হবে।
প্রাথমিকভাবে শরীর-এর সকল মাংসপেশি একসঙ্গে ইচ্ছাকৃতভাবে শক্ত করে রাখা হবে। ১ম ভঙ্গি নিম্নের চিত্রের অনুরূপ।
(১ম ভঙ্গি) তারপর ২য় ভঙ্গি চিত্রের অনুরূপ ভঙ্গিতে মাংসপেশিসমূহ শিথিল করতে হবে, দু'হাত শরীরের দু'পাশে শিথিল অবস্থায় রাখতে হলে।
এরপর ৩য় জদি চিত্রের ন্যায় পা ছড়িয়ে রাখতে হবে। দুপায়ের মান্ডখালে সামান্য ব্যবয়ান রাখতে হবে। ঢোশ বন্ধ করে ধীরে বীয়ে শ্বাস গ্রহণ করতে হবে এবং শ্বাস ত্যাগ করতে হবে। অতঃপর দুয়াততে আয়ো শিথিলয়াবে শরীর থেকে দু'দিকে সরিয়ে প্রাখতে হবে, সাথে সাথে দু'পায়ের ব্যবধান বাড়াতে হবে। চোখ বন্ধ অবস্থায় মীরে নীয়ে শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করতে হবে, সফল পেশি এবং আয়ুকে বিশ্রাম সুখ লাভ করতে নিতে হবে।
মন প্রথমে পায়ের আঙুলে নিবন্ধ রাখতে হবে। পায়ের আঙুল এবং পায়ের পাতা বিশ্রাম সুখ লাভ করছে এরূপ মনে ভাবতে হবে। এখন মনকে হাঁটুর কাছে নিবন্ধ করে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে সকল অংশের ওপর পর্যায়ক্রমে মনকে নিবন্ধ রেখে প্রতি অংশের বিশ্রাম সুখ লাভের কথা ভাবতে হবে। এরপর দৈহিক বিশ্রাম লাভের শেষে মনকেও বিশ্রাম নিয়ে নির্লিপ্তভাবে অবস্থান করতে হবে। এক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে যেন ঘুম না আসে। শষ্যাতেও এ আসনটি করা যায়। বিশ্রাম-সুখ লাভের শেষে জোরে জোরে শ্বাস। গ্রহণ ও ত্যাগ করতে হবে। তারপর পর্যায়ক্রমে (চিত্র ৩য় ভঙ্গি থেকে ২য় ভদি) পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে আসতে হবে। এস্তানে ৩০ সে. থেকে ১ মি. পর্যন্ত অভ্যাস করতে হবে। প্রতিবারে ১৫ মি. পর্যন্ত এ আসন অভ্যাস করতে হবে।
ফল (Effect) : এই আসনটিতে দেহের সফল অঙ্গ এবং পেশি বিশ্রাম সুখ লাভ করে।
পদ্মাসন (Padmasan) :
পদ্ধতি (Process)। চিত্রের ন্যায় প্রথমে পা দুটো সামনে ছড়িয়ে সোজা হয়ে ফ্লোরে বসতে হবে। এবার ডান পা হাঁটুর (kncc) কাছ থেকে ভেঙে বাম উরুর (Left thigh) উর্ধ্বর্ণভাগে (চিত্র অনুযায়ী) স্থাপন করতে হবে। তারপর বাঁ পা হাঁটুর কাছ থেকে ভেঙে ডান উরুর (Right thigh) ঊর্ধ্বভাগের উপর, স্থাপন করতে হবে। দু'পায়ের গোড়ালি প্রায় তলপেট (Abdomen) স্পর্শ করবে। ডান উরু এবং বাম উরুর উপর যথাক্রমে বাঁ পায়ের পাতা ও ডান পায়ের পাতা থাকবে। মাথা, ঘাড় এবং মেরুদন্ড (backbone) সোজা রাখতে হবে। হাত দুটো চিত্রের ন্যায় সংস্থাপন করতে হবে। নাসামে দৃষ্টি স্থাপন করতে হবে এবং চোখ বন্ধ রাখতে হবে।
সময়: এ আসনটি প্রতিবারে ৩০ সেকেন্ড বা তদপেক্ষা বেশি সময় অভ্যাস করা যাবে। এক্ষেত্রে শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখা প্রয়োজন।
ফল (Effect):
যে-কোনো প্রকার ধ্যানধারণার পক্ষে এ আসনটি বিশেষ প্রশস্ত। এ আসনে প্রত্যহ ১৫ মিনিট কাল চোখ বন্ধ রেখে বসে থাকলে সহজেই মনঃসংযোগ হয়, ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়, হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। এই আসনটি নিয়মিত অভ্যাস করলে মেরুদণ বক্র হয় না।
গোমুখাসন (Gomukhasan) :
যোগ ব্যায়াম পদ্ধতি (Procen)। চিত্রের ন্যায় প্রথমে পা দুটো সামনে ছড়িয়ে সোজা হয়ে ফ্লোরে বসতে হবে। এবার ডান পা হাঁটুর কাছ থেকে মেয়ে বাঁ পায়ের নিচে (ক) নং চিত্রের ন্যায় অনুজণভাবে স্থাপন করতে হবে। ডান পায়ের গোড়ালি দ্বারা (ক) নং চিত্রের ছবির ন্যায় স্পর্শ করতে হবে। ভাবতি প্রতি করতে তারপর বাঁ পা হাঁটুর কাছ থেকে ভেঙে ছবির ন্যায় ডান পায়ের উপর স্থাপন করতে হবে এবং বাঁ পায়ের গোড়ালি খাঁরা দক্ষিণ নিয়ম স্পর্শ করতে হবে। এক্ষেত্রে মেরুদন্ড সোজা রেখে বসতে হবে এবার চিত্র-খ এর অনুরূপ বাঁ হাত মাথার উপর তুলে কনুইয়ের কাছ থেকে ভেঙে পিঠের দিকে নামাতে হবে এবং ডান হাত কনুইয়ের কাছ থেকে ভেঙে বাঁ দিকে ঘুরিয়ে বাঁ হাতের আঙুল ধরতে হবে।
সময় (Time):
৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট কাল এই আসনে একাদিক্রমে অবস্থান করা যাবে।
ফল (Effect):
এ আসন নিয়মিত অভ্যাসে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বাত, সাইটিকা, পরিপাক যন্ত্রের গোলযোগ, পিঠের মাংসপেশির বেদনা, মূত্রপ্রদাহ, নিদ্রাহীনতা ইত্যাদি দূর হয়।
সর্বাঙ্গাসন (Sharbaugusan):
পদ্ধতি (Process)। চিত্রের ন্যায় মেখের উপর কম্বল যা তোষক বিছিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়তে হবে এবং হাত দুটো পাশে রাখতে হবে। এবার চিত্রের ন্যায় বীয়ে বীরে পা উপরের দিকে তুলতে হতে ও যতদূর সম্ভব পা সোজা অবস্থায় রাখার চেষ্টা করতে হবে এগং হাত নিয়ে কোমর ও পিটের মধ্যস্থলে Sigyan নিতে হবে। তাথ ও গাড় ভূমি স্পর্শ ভয়ে থাকবে, পা দুটো না দেড়ে সোজা রাখতে হবে। চিবুক, কণ্ঠকূল স্পর্শ করতে হবে কোনেদ্রাকার ব্যবধান থাকবে না। এ আসনে ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিটার পর্যন্ত অবস্থান করার পর পুনরায় পূর্ব অবস্থায় ফিরে আসতে হবে এবং আসনটি পুনয়ায় অভ্যাস করতে হবে।
সময় (Time):
এ আসনটি দিনে দু'বার করা যায়। প্রতিবার এ আসনে ৩০ সেকেন্ড থেকে ১. মিনিট কাল অবস্থান করা যায়। ধীরে ধীরে এ সময় বাড়ানো যায়। তবে ১৪ বছর এর নীচে ছেলে/মেয়েদের এই আসন করা উচিত নয়।
ফল (Elfect):
এই আসন নিয়মিত অন্ন্যাস করলে স্নায়ুমণ্ডলীতে পর্যাপ্ত রক্ত সঞ্চালিত হয়, দেহের পুষ্টি সাধিত হয়, হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়, শ্বাসকার্য স্বাভাবিক থাকে, শরীর সার্বিকভাবে সুস্থ
শশাঙ্গাসন (Shashangasan):
মানে খরগোশ এবং শশাঙ্গ মানে খরগোশের দেহ। খরগোশ ভয় পেলে মাথা নীচু করে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করে। এই আসনে অবস্থানকালে আসনকারীর দেহ অনেকটা সেরূপ দেখায়। তাই এই আসনের নাম শশাঙ্গাসন।
প্রণালি: হাঁটু গেড়ে বজ্রাসনে বসতে হবে। দু'হাত দিয়ে পায়ের গোড়ালি চেপে ঘরে এবং সঙ্গে সঙ্গে মাথা নুইয়ে হাঁটুর সামনে এনে মাথার তালু মাটিতে রেখে কপাল হাঁটুতে ঠেকিয়ে পাছা উপরে তুলে হবিয় মতো যতটা সম্ভব সামনে নিয়ে আসতে হবে। এ অবস্থায় যাতে কোমর থেকে মাথা পর্যন্ত ধনুকের মতো বাঁকা হয় এবং পিঠে ও পাঁজরে বেশ টান পড়ে এবং পেটের পেশিগুলো সঙ্কুচিত হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। এই অবস্থায় লক্ষ রাখতে হবে, যাতে চিবুক বুকে ঠেকে কণ্ঠনালির উপর হালকা চাপ পড়ে। এই আসনটি প্রথম প্রথম ৩০ সেকেন্ড করে ৪ বার অভ্যাস করতে হয় এবং প্রতিবার অভ্যাসের পর ৩০ সেকেন্ড শবাসন করা প্রয়োজন।
উপকারিতা:
এ আসনে মেরুদণ্ডের ৩২টি সংযোগস্থল প্রসারিত হওয়ায় এবং মেরুদণ্ডে লম্বালম্বি টান পড়ায় এই অবস্থায় মেরুদণ্ড সবচেয়ে লম্বা হয়। এই আসন অভ্যাস করার আগে ও আসন অভ্যাসের সময় যদি মেরুদণ্ডের মাপ নেয়া হয়, তাহলে দেখা ধাবে, আসন করার সময় মেরুদণ্ড স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে প্রায় দু'ইঞ্চি বেড়েছে। খর্বকায় যুবকরা এই আসনের অভ্যাস করলে লম্বা হয়। এই আসনে যকৃৎ ও প্লীহার কাজ ভালো হওয়ায় হজম শক্তি বাড়ে এবং থাইরয়েড ও পিটুইটারি গ্রন্থি ও প্যানক্রিয়াসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বহুমূত্র অস্বাভাবিক স্থূলত্ব বা শীর্ণতা রোগ হয় না এবং শরীর যৌবনোচিত পুষ্টি লাভ করে।
যারা অধিক বয়স বা স্কুলত্বের জন্য শীর্ষাসন অভ্যাস করতে পারে না বা দুর্বল হৃৎপিণ্ডের জন্য যাদের শীর্ষাসন করা উচিত নয়, তাদের পক্ষে এই আসন বিশেষ উপকারী। এতে শীর্ষাসনের ফল অনেকটা পাওয়া যায়। এই আসন উচ্চতা বৃদ্ধিরও সহায়ক।শশাঙ্গাসন অভ্যাসের পর উষ্ট্রাসন ও অর্থৎমসোন্দ্রাসন অভ্যাস করা একান্ত প্রয়োজন।
বীসন (Shirshasan) :
পদ্ধতি (Poem)। ফ্লোরে প্রথমে কম্বল বিছিয়ে নিতে হবে। এরপর চিত্রের ন্যায় তারপর Kret down ভঙ্গিতে অর্থাৎ জোর বাগতে হবে। হাত ভাঁজ করে ১ম প্রদি চিত্রের মতো হাতের তালুর মধ্যে যাথা রাখতে হবে। হাতের চেটো ভূমি স্পর্শ করে বাজবে। পায়ের আঙুলও চোরে থাকবে। দেহ হবে রামধনুর মতো। এবার ধীরে ধীরে দুপা একত্রে করে ওপরে তোলার চেষ্টা করতে হয়ে। প্রথমে পা দুটো হাঁটুর কাছ থেকে ভেঙে ১৯ ভঙ্গি চিত্রের মতো রাখতে হবে। এ অবস্থায় কয়েক সেকেন্ড থাকতে হবে। এবার ২য় জদি চিত্রের ন্যায় পা দুটো সোজা করে উপরে তুলতে হবে। এই অবস্থায় কয়েক সেকেন্ড থাকতে হবে। খালি পেটে এই আসনটি কথা ভালো। এই আসনে অবস্থান কালে নাক দিয়ে শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করতে হবে।
সময় (Time):
নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট পুরানো শিক্ষার্থীদের জন্য ১ মিনিট থেকে ৫ মিনিট।
ফল:
এই আসন নিয়মিত অভ্যাস করলে মেরুদণ্ড, পাকস্থলী, প্লীহা এবং যকৃতের কাজ ভালো হয়। হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং পেটের সঞ্চিত চর্বি হ্রাস পায়।
স্বাস্থ্যাসন (Shasthyasan):
ব্যবহারিক ক্ষেত্রে যোগ ব্যায়ামের দ্বিতীয় পর্যায়ের আসনের নাম হলো স্বাস্থ্যাসন। যে-সব আসন হারা দেহ নীরোগ, সুস্থ, ভ কষ্টসহিষ্ণু যোগের উচ্চাঙ্গের ক্রীড়া সাধনের উপযোগী বা সমাজ ও সংসারের প্রয়োজনের উপযোগী সর্বকর্মে নিয়োজিত করার শারীরিক ও মানসিক শক্তি গঠিত হয়, তাকে স্বাস্থ্যাসন বলে। স্বাস্থ্যাসনের কিছু আসন নীচে বর্ণনা করা হলো-
হলাসন (Holasan):
পদ্ধতি (Process)। প্রথমে ফ্লোরে/মেন্টের উপর কথল না তোগক বিছিয়ে নিতে হবে। তারপর চিত্রের ন্যায় চিৎ হয়ে (Lis ট্রেলরে Flat) শুয়ে পড়তে হবে। হাত দুটো দেহের দুপাশে রাখতে হবে। এবার পা দুটো সোজা করে (হাঁটু না ভেঙে) আস্তে আস্তে উপরে তুলতে হবে। অর্থাৎ, পা দুটো মাখা ছাড়িয়ে নিয়েও ছবির ন্যায় কম্বল স্পর্শ করবে। মাথা থেকে যতটা সম্ভব দূরে পায়ের আঙুল দিয়ে ফ্লোয়ে/মেয়ে স্পর্শ করতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে যে, পা দুটো কোনোক্রমেই হাঁটুর কাছ থেকে বাঁকানো যাবে না। পুতনি (Chin) বুকের সঙ্গে লাগবে, কেবলমাত্র নাক দিয়ে শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করতে হবে। পা মাথার উপরে দেয়ার সমর ধীরে ce শ্বাস নিতে হবে। আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে আসার সময় নীরে ধীরে নাক দিয়ে শ্বাস ত্যাগ করতে হবে। সম্পূর্ণ আসন ভঙ্গিতে অবস্থান কালে স্বাভাবিকভাবে নাক দিয়ে শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করতে করতে ৩০ সেকেন্ড ১ মিনিট কাল অবস্থান করতে হবে।
ফল (Effect):
মেরুদণ্ড সংশ্লিষ্ট স্নায়ু (Nerve)-সমূহ এই-আসন নিয়মিত অভ্যাসে বিশেষ কার্যকরী অবস্থায় থাকে। পিঠের পেশি এবং মেরুদণ্ডের দু'পাশে সংবেদনশীল Nerve সমূহ এই আসন অভ্যাসে বিশেষ সজীবতা লাভ করে। বিভিন্ন প্রকার বাতরোগ দূর করে। এ ছাড়া মেরুদণ্ড নরম এবং গুণসম্পন্ন হয়।
মৎস্যাসণ (Matalyosan):
যোগ ব্যায়াম পদ্ধতি (Process)। ফ্লোয়ে/মেন্টের উপর ভম্বল বিছিয়ে নিতে হবে। তারপর পা দুটো চিত্রের ন্যায় প্রথমে সাদনে ছড়িয়ে জেলাকে সোজা হয়ে বলতে হবে। এবার বাঁ পা হাঁটুর কাছ থেকে বাঁকা করে কম্বল স্পর্শ করা অবস্থায় বাঁ পায়ের গোড়ালিটি মলদ্বার এর সঙ্গে চেপে ধরতে হবে। এবার চিত্রের ন্যায় বাঁ পা বাঁ দিকে আনতে হবে এবং খাড়াভাবে রাখতে হবে। এবার ডান হাতটি পিছনের দিক থেকে পুরিয়ে নিয়ে ডান পায়ের গোড়ালি টেনে ধরতে হবে। এখার হাত দিয়ে বাঁ হাঁটু শক্ত করে ধরতে হবে।
এ অবস্থায় ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট অবস্থান করে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসতে হবে। মৎস্যাসনের অর্থ চিত্রের ন্যায় ডান পা কম্বল স্পর্ণ অবস্থায় হাঁটুর কাছ থেকে band করে ডান পায়ের গোড়ালি নিয়ে মলদ্বার স্পর্শ করতে হলে তারপর বাঁ পা ডান পায়ের ডান দিকে খাড়াভাবে রাখতে হবে। তারপর ডান হাত দিয়ে বাঁ হাঁটু বগলের সঙ্গে চেপে ধরতে হবে। তারপর ডান হাঁটু শক্ত করে টেনে। ধরতে হবে।
সময় (Time):
প্রতিনিন উভয় দিকে ২ বার করে মোট ৪ বার এই আসনটি অভ্যাস করতে হবে। প্রতিবার যে দিকেই হউক এই আসনে ৩০ সে. বা ১ মি.কাল অবস্থান করতে হবে।
ফল (Effect):
এই আসনটি নিয়মিত অভ্যাস করলে দৈহিক শক্তি বৃদ্ধি পায়, দেখে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং মেরুদও সবল হয়।
পবন মুক্তাসন (Pabon muktasan) :
পদ্ধতি (Process)। প্রথমে কম্বল বিছিয়ে নিতে হবে ফ্লোরে। অতঃপর চিত্রের ন্যায় শরীরের দু'পাশে হাত রেখে প্রথমে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়তে হবে। তারপর দীর্ঘক্ষণ ধরে নাক দিয়ে শ্বাস নিতে হবে এবং শ্বাস নেয়ার সময় বাঁ পা হাঁটুর কাছ থেকে ভেঙে পেটের উপরে রেখে চিত্রের ন্যায় ভঙ্গিতে দুহাত দিয়ে চেপে ধরতে হবে। এতে তলপেটে চাপ লাগবে। এ অবস্থায় কিছুক্ষণ থাকার পর (অন্ত ৩. ৩০ সে./১ মি.) পা নামিয়ে সোজা করে ছড়িয়ে রাখতে হবে। এবার ডান পা অনুরূপভাবে হাঁটুর কাছ থেকে ভেঙে পেটের ওপর রেখে দু'হাত দিয়ে হাঁটু চেপে ধরতে হবে। এভাবে একবার বাঁ পা ও স্নান পা Alternately পেটের উপর তুলে দুহাত দিয়ে চাপ দিতে হবে। এতে তলপেটে চাপ লাগবে।
সময় (Time):
অন্তত ৩০ সে./১ মি. করে প্রতিবার আসনটি করতে হবে। এভাবে ৩/৪ বার alternately এই অভ্যাস করতে হবে।
ফল (Effect):
যাদের পেটে অত্যধিক বায়ু জন্মে, এই আসনটি নিয়মিত অভ্যাসে তাদের পেটের বায়ু নির্গত হয়। হয়াম শক্তিতে সাহায্য করে। এই আসনে লিভার, প্লীহা ও পাকস্থলীর দৌর্বল্য দূরসহ পেটের চর্বি হ্রাস করে।
(Uraman):
পদ্ধতি (Procen) : ফ্লোরে করল বিছিয়ে চিত্রের ন্যায় প্রথমে হাঁটু গেড়ে বসতে হবে। তারপর পিছন দিকে দু'হাত গুণিত দুহাত দিয়ে ইট্রক নিয়াশে বা গোড়ালি ধরতে হবে (ছবির ন্যায়)। এবার ধীরে ধীরে মাথা পিছন দিকে দুইয়ে পেট ও যুক্ত যথাসম্ভর সোজা রেখে শরীরকে ধনুকের হতো বাঁকা করতে হবে। হাঁটুর উপর থেকে কন্ঠ পর্যন্ত অংশ যেন বেশ টান টান থাকে। এই আসস শেষে আধার পূর্বাবস্থায় ফিরে আসতে হবে। পুনরায় এই আসনটি একই কায়দায় অভ্যাস করতে হবে।
সময় (Time):
এই আসনটি প্রতাহ চারবার এবং প্রতিবার ১ মিনিট বা ৩০ সেকেন্ড করে অভ্যাস করতে হবে।
ফল (Effect):
এই আসনটি প্রত্যহ অভ্যাস করলে মেরুদণ্ড সংলগ্ন স্নায়ু, পেশি সবল হয়, উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ও বুকের হাড় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
প্রাণ এবং প্রাণায়াম (Prana and Pranayama):
প্রাণ (Prana) : Prana শক্তি বা বল সর্বজনীন নীতি। এটি মহাজাগতিক-প্রলয়কারণস্বরূপিনী। এর মাধ্যমে প্রকৃতির লুকানো ক্ষমতা মানুষ অনুধাবন করে।
প্রাণায়াম (Pranayama):
প্রাণায়াম হচ্ছে জীবনীশক্তি। শ্বাসের এই ব্যায়ামের মাধ্যমে আমাদের পুরো শরীরতে আমরা সুপারচার্জ করতে পারি। পরিষ্কার শ্বাসের মাধ্যমে আমাদের শারীরিক ও মানসিক অবমুক্ত হয়।
নাড়িগুছি প্রাণায়াম (Nadisuddhi pranayama):
এই প্রাণায়াম অনুশীলনের জন্য পিঠ একেবারে খাড়া রাখতে হবে,খাড় সোজা রাখতে হবে। দৃষ্টিকে দৃঢ়ভাবে সামনে কেন্দ্রীভূত করা উচিত এবং তারপর চোখ বন্ধ করে দেয়া উচিত। এবার প্রথমে বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ডান নাক চেপে খুব ধীরে ধীরে (ছবির মতো) বাম নাক দিয়ে দম নিতে নিতে ফুসফুস যতটা সম্ভব ফোলাতে চেষ্টা করতে হবে। এরপর বাম নাক চেপে ডান নাক দিয়ে ধীরে ধীরে দম ছাড়তে হবে। এবারে ডান নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে বাম নাক দিয়ে ছাড়তে হবে। এভাবে প্রতি নাকে ৩/৪ বার করে উভয় নাকে ৬/৮ বার অভ্যাস করতে হবে।
ফুলিং প্রাণায়াম (Cooling pranayama):
এরূপ প্রাণায়াম তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও মানসিক চাপ এবং উত্তেজনা কমিয়ে দেয়। এটি পেশি শিথিল এবং রক্ত পরিশোধনে সহায়তা করে। এতে শরীরের সিস্টেমের মধ্যে সূক্ষ্ম পরিবর্তন তৈরি করতে শ্বাসের সদ্ব্যবহার করা হয়।
শীতালি প্রাণায়াম (Sheetali pranayama):
এটি গ্রীষ্মে বিশেষভাবে উপযোগী। এই প্রাণায়ামের শরীর ও মনের উপর একটি শান্ত ও শীতল প্রভাব রয়েছে।
অধর ও ওষ্ঠের মাঝখান দিয়ে জিহ্বাকে বের করে যে-কোনো ধ্যানাসনে বসতে হবে। এখন অধর ওষ্ঠকে পক্ষীচকুর মতো করে জিহ্বায় দিয়ে ধীরে ধীরে বায়ু গ্রহণ বা পূরক করতে হবে। পূরক শেষে আকর্ষিত বায়ু জলন্ধরবন্ধ, উড্ডীয়ানবন্ধ ও মূলবন্ধাদি তিনটি মুদ্রা দ্বারা ধারণ করে নিজ সামর্থ্যমতো ১৫/২০ সেকেন্ড কুম্ভক করতে হবে- যে পর্যন্ত না পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত দেহস্থ নাড়িসমূহের বায়ু রোধ হয়। এবার উভয় নাসাপুট দিয়ে ধীরে ধীরে বায়ু ত্যাগ বা রেচক করতে হবে। ঠিক এইরকমভাবে এই প্রাণায়াম কমপক্ষে ৫ মিনিট অভ্যাস করতে হবে।
রক্তচাপাক্রান্ত রোগীরা কেবলমাত্র পূরক রেচক অভ্যাস করলে খুব ভালো ফল লাভ করবে। পূরকের সময় শরীরের অভ্যন্তরে ঠান্ডা বাতাসের প্রবেশ অনুভব করবে এবং সাধারণভাবে রেচক করবে। মোটেই কুম্ভক অভ্যাস করবে না।
উপকারিতাঃ
যোগীরা বলেন, এই প্রাণায়াম অভ্যাসে রক্ত শুদ্ধ হয় এবং প্রাণশক্তি এত বৃদ্ধি পায় যে, বিষাক্ত সর্পদংশনেও এ প্রাণায়াম অভ্যাসকারীর মৃত্যু হয় না। পিত্তপ্রধান নরনারীর পক্ষে এই প্রাণায়াম বিশেষ উপকারী। উচ্চচাপ রোগীরা এই প্রাণায়াে আশ্চর্য সুফল লাভ করবে।
বীতকারী প্রাণায়াম (aikari pran):
এল প্রভাব ছাড়াও অন্তঃস্রাণী সিস্টেমে ভারসাম্য এনে দেয় এবং জীবনীশক্তি তৈরিতে সহায়তা করে।
গেনজানো হ্যামাসথে যগে অখনও এই সরু করে পরাম্পর সংলগ্ন করতে হবে- এই সংলগ্ন করতে হবে। এবার মুখ দিয়ে একটানা বিবিসি শব্দ করতে করছে বেশ জোরের সঙ্গে হীরে ধীরে মুখ দিয়ে যায় গ্রহণ বা পূর্বক করতে হবে। এভাবে পূরজ শেষ হলে ৫/১০ সেক্ষেত বৃদ্ধক করে উত্তয় নাসিকা হায়া বায়ু তাগে বা রেচক করতে হবে। ঠিক এভাবে নিজ সামর্থ্যমতো ৫ থেকে ১০ মিনিট এই এপায়াম অভ্যাস করতে হবে।
চিন্তা। প্রতিবার যুদ্ধকের সময় চিন্তা করতে হবে- আমার নিদ্রা, আশস্যাদি ও প্রমোভাব দূর হয়ে যাচ্ছে- আমার দেহমন দিব্য শক্তির অধিকারী হচ্ছে।
উপকারিতা। এই প্রাণায়াম অভ্যাসে নিস্তা, আলস্য, জড়তানি ও
শারীরিক দুর্বলতা দূর হয়- দেহ বলশালী ও স্বাস্থ্যদীপ্ত হয়।
সাদতা প্রাণায়াম (Sadants pranayama):
যে-কোনো আরামদায়ক ধ্যানের ভঙ্গিতে বসতে হবে, বিশেষত পদ্মাসনে।মাথা ও মেরুদও সোজা রাখতে হবে।সারা শরীর শিথিল করে এবং চোখ বন্ধ করতে হবে।নাঁতগুলোকে হালকা করে ধরে রাখতে হবে খাঁতের ফাটল নিয়ে ধীরে ধীরে এবং একটানা শ্বাস নিতে হবে।শ্বাস মেয়ার শেষে মুখ বন্ধ করতে হবে।
নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়তে হবে। সাদস্ত প্রাণায়ামের অনুশীলনের সাথে পীতল প্রভাব বাড়ানোর জন্য শ্বাস নেয়ার সময়কাল ধীরে ধীরে দীর্ঘ হওয়া উচিত। ধীরে ধীরে রাউন্ডের সংখ্যা ৯ থেকে ৫ পর্যন্ত বাড়াতে হবে।
ফলাফল:
সাদস্ত প্রাণায়ামের অনুশীলনের শীতল প্রভাব রয়েছে, যা মানসিক উদ্বেগ ও উত্তেজনা দূর করে মনকে শান্ত করতে সাহায্য করে। এটি শ্বাসযন্ত্রের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় বাড়ায়। সাদস্ত প্রাণায়ামের অভ্যাসটি পায়োরিয়া এবং মাড়ির অতি সংবেদনশীলতায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের জন্য খুবই উপকারী।
উদরী গাণায়াম (Ujjayi pranayama):
উজ্জয়ী একটি মণ্যকণা সংক্রান্ত খাগ। এক্ষেত্রে খলন এবং বাম্পানিননি গুরুরই নাক দিয়ে সম্পন্ন হয়। এরূপ খান প্রথমে নিছু উনখ (লগম ও দ্বিতীয় ছক সক্রিয়) দিয়ে নিম্ন পাঁজর বাঁচা (তৃতীয় এবং চতুর্থ ছক) এবং পরিশেষে যুক্ত ও গলার যথ্য দিয়ে শেষ হয়।
যে-কোনো ধ্যানাসনে বসে মুখ বন্ধ রেখে গলা (ভোকাল কর্ড) হতে সশব্দে উন্নয় নালিকা দিয়ে দমভর বায়ু গ্রহণ বা পুরক করতে হবে। পূরকান্তে চিবুক কণ্ঠকূণে সংলগ্ন করে জালন্ধরবন্ধ অবস্থায় বক্তিপ্রদেশের স্নায়ুগুলোকে আকর্ষণ করে নিজ নিজ সামর্থ্যমতো ১৫ থেকে ৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত বায়ুষারণ বা কুম্ভক্ত করতে হবে। এবার স্নায়ুর আকর্ষণ শিথিল করে এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা দক্ষিণ নাসাপুট বন্ধ করে নীরে ধীরে নাম নাসিকা দিয়ে খায়ু ত্যাগ বা রেচক করতে হবে। ঠিক এভাবে এই প্রাণায়ামটি উওয় নালিকায় ১০ থেকে ২০ বার অভ্যাস করতে হবে।
উপকারিতা:
এই প্রাণায়াম অভ্যাসে কফরোগ, হাঁপানি ইত্যাদি সেরে যায়। অকালমৃত্যু ও জরা রোধ হয়। উচ্চচাপ ভোগীরা এই প্রাণায়ামে আশ্চর্য সুফল লাভ করবে।
পাবলিশ অর্গানাইজেশন সিয়াম হাসান নিউজ লিমিটেড