ফেরেশতা পরিচিতি:
মালায়েকা বা ফেরেশতা আল্লাহর সৃষ্টির অন্যতম এক সৃষ্টি।তারা নূরের তৈরি। নবী রসূলগণ ব্যতীত কোন মানব চোখ তাদেরকে দেখতে ও উপলব্ধি করতে পারে না।তারা পানাহার করে না।ঘুমায়ওনা।তন্দ্রাও তাদের আচ্ছন্ন করতে পারে না। তারাপুরুষ লিঙ্গও নয়।
এমনকি তাদের ده সম্পর্কে ক্লিব লিঙ্গেরও কল্পনা করা যায় না। তারা সর্বদা খোদায়ী নির্দেশ পালনে ব্যাপৃত। খোদায়ী জিকির তাদের জীবন ধারণ, কাম-ভাব তাদের মধ্যে দেয়াই হয়নি। আসমান জমীনে অসংখ্য ফেরেশতাকে আল্লাহপাক বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত রেখেছেন।
যাদের সংখ্যা আরাহ ব্যতীত আর কেউ বলতে পারে না। যারা কস্মিনকালেও আল্লাহর হুকুমের সীমা সংঘন করেন না। বরং আল্লাহ্ তায়ালা তাদেরকে যে কাজ করার নির্দে ৭ দিয়েছেন তারা সে কাজ আঞ্জাম দিতে সদা সক্রিয়।
তাদের মধ্যে চারজন ফেরেশতা হলো সবচেয়ে বড়। আর আল্লাহ্ তায়ালা তাদেরকে বড় বড় চারটি কাজের জিম্মাদার বানিয়েছেন। চার ফেরেশতার নাম হল একঃ হযরত জিব্রাঈল (আঃ)। দুইঃ হযরত ইস্রাফীল (আঃ)। তিনঃ হযরত মিকাঈল (আঃ)। চারঃ হযরত আযরাঈল (আঃ)। হযরত জিব্রাঈল আমীন আঃ কে আল্লাহ্ তায়ালা আম্বিয়ায়ে কেরামের (আ) কাছে ওহী পৌছে দেয়ার জন্য নিযুক্ত করেছেন।
হযরত ইস্রাফীস (আঃ)-কে আল্লাহ পাক কিয়ামত সংঘটিত করার দায়িত্বে নিয়োজিত রেখেছেন। তিনি একটি সিংগা হাতে নিয়ে আল্লাহর নির্দেশের প্রতীক্ষায় রয়েছেন। আল্লাহ্ নির্দেশ দেয়ার সাথে সাথে তিনি তাতে ফুৎকার দিবেন। ফলে সারা পৃথিবী চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে এবং কিয়ামত সংঘটিত হবে।
হযরত মিকাঈল (আঃ) সৃষ্ট জীবের খাদ্যের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত। এছাড়াও বৃষ্টি বর্ষণ, বায়ু প্রবাহ ও তারই অধীন। আর তার অধীনস্থ রয়েছেন আরো অনেক ফেরেশতাগণ। যাদের কতেক বায়ু, নদী-নালা ইত্যাদির দায়িত্বে নিয়োজিত এবং হযরত আযরাঈল (আঃ) সৃষ্ট জীবের জান কবজ করার দায়িত্বে নিয়োজিত।
তার অধীনেও অগণিত ফেরেশতা রয়েছে এবং ভাল মানুষের জান নেয়ার জন্য এক ধরনের ফেরেশতা নিয়োজিত। আর বদ লোকের প্রাণ বের করার জন্য কঠোর আকৃতির ফেরেশতা নিয়োজিত।
এছাড়াও কিছু ফেরেশতা সর্বদা মানুষের সাথে থাকেন। তারা মানুষের ভাল-মন্দ আমল লিপিবদ্ধ করেন। তাঁদেরকে কিরামান কাতিবীন বলা হয় এবং কিছু ফেরেশতা আল্লাহর নির্দেশে মানুষের মধ্য হতে শিশু, দুর্বল ও বৃদ্ধাদেরকে বিপদাপদ হতে রক্ষা করার দায়িত্বে নিয়োজিত।
কিছু ফেরেশতা মানুষের মৃত্যুর পর কবরে প্রশ্ন করার কাজে নিয়োজিত। তাদেরকে মুনফার নাকীর বলা হয় এবং কিছু ফেরেশতা জান্নাত ও জাহান্নামের শৃংখলার কাজে নিয়োজিত এবং কিছু ফেরেশতা আল্লাহর আরশ বহন করার কাজে নিয়োজিত এবং কিছু ফেরেশতা আল্লাহর তাসবীহ্ তাহলীল ও তাঁর পরিবত্রতা বর্ণনায় সর্বদা মশগুল।
আর একদল ফেরেশতা রয়েছে, যারা প্রতিনিয়ত পৃথিবীতে বিচরণ করে এবং যেখানে আল্লাহর জিকির, ওয়াজ মাহফিল, কোরআন তেলাওয়াত, ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হয় সে সকল মসলিশে উপস্থিত হয়। আর তথায় অংশ গ্রহণকারী সকলের ব্যাপারে আল্লাহর দরবারে সাক্ষ্য প্রদান করে।
মানুষের সৃষ্টি:
স্মরণ করুন ঐ সময়ের কথা যখন আপনার প্রতিপালক ফেরেশতাদেরকে বললেন- নিশ্চয় আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করব। তারা বলল,-আপনি তথায় এমন জাতির সৃষ্টি করবেন, যারা তথায় বিশৃংখলা সৃষ্টি করবে।
আর রক্তপাত ঘটাবে। অথচ আমরাই তো আপনার প্রশংসায় গুণকীর্তন করছি ও আপনার পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করছি। আল্লাহ্ বললেন, নিশ্চয় আমি যা জানি, তোমরা তা জান না।
পরবর্তিতে আল্লাহ তায়ালা মাটির দ্বারা হযরত আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি
করলেন এবং হযরত আদম (আঃ)-কে ফেরেশতাদের সম্মুখে উপস্থাপন করে তাদেরকে তাঁকে সেজদা করার নির্দেশ দিলেন। আল্লাহর হুকুমের তাবেদার ফেরেশতাগণ তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে সেজদা করল। কিন্তু ইবলিস তাঁকে সেজদা করা হতে বিরত রইল আর বলল, আমি সেজদা করব আদমকে।
অথচ তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি থেকে। আর আমি সৃজিত হয়েছি স্বণ সাদৃশ্য অগ্নিকুণ্ড থেকে। তাই ইবলিস আল্লাহর ক্রোধে নিপতিত হল। আর তাকে চিরস্থায়ী শান্তি নিবাস জান্নাত হতে বের করে দেয়া হল। আর তখনই শয়তান প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হল নে, সে আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি জীব মানব জাতিকে পথভ্রষ্ট করবেনই। আর আল্লাহ তাকে বলে দিলেন, তুই আমার প্রিয় বান্দাকে কিছুতেই গোমরাহ্ ও পদচ্যুত করতে সক্ষম হবি না।
বিশ্ব পরিমণ্ডল মানবের প্রাদুর্ভাব:
আল্লাহ্ তায়ালা হযরত আদম (আঃ)-কে বেহেশতে বসবাসের জন্য বন্দোবস্ত করে দিলেন এবং তার নিঃস্বঙ্গতা দেখ তার বাম পাঁজরের অস্থি হতে হযরত হাওয়া (আঃ)-কে সৃষ্টি করলেন। তারা দু'জন পরমানন্দে বেহেশতে বসবাস করতে লাগলেন।
কিন্তু ইবলিস শয়তান তাদের পিছু নিল। তাদেরকে বিপথগামী করার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে লাগল। আল্লাহ তায়ালা আদম ও হাওয়া (আঃ)-কে বেহেশতের একটি বৃক্ষের ফল ভক্ষণ করতে নিষেধ করে দিলেন। এ নিষেধাজ্ঞা দ্বারা আল্লাহর উদ্দেশ্য ছিল সে জাতীয় সকল বৃক্ষের ফল ভক্ষণ করা। কিন্তু আদম (আঃ) বুঝতে পারলেন, শুধু মাত্র ঐ বৃক্ষটিরই ফল ভক্ষণ করা হতে নিষেধ করা হয়েছে। আর শয়তান এ সুযোগটির সদ্ব্যবহার করল।
আর হযরত আদম ও হাওয়া (আঃ)-কে বেহেশতে
স্থায়ী বসবাসের সুযোগ করে দেয়ার ধোকা দিয়ে তাদেরকে ঐ জাতীয় বৃক্ষের ফল ভক্ষণ করাল। ফলে তারা আল্লাহর মর্জির খেলাফ করলেন এবং আল্লাহর নির্দেশে দু'জনকে পৃথিবীর দু'প্রান্তে নামিয়ে দেয়া হল।
ততক্ষণে তারা আপন অপরাধের কথা বুঝতে পারলেন এবং সেজদাবনত হয়ে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানাতে লাগলেন। তারা বললেন-
হে,আমাদের প্রতিপালক। আমরা আমাদের নফসের উপর অত্যাচার করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাব।
এভাবে বহুদিন কান্নাকাটির পর আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর ক্ষমা পরবশ হলেন, এবং তাদেরকে একত্রিত করে দিলেন, আর সে থেকেই বিশ্ব পরিমণ্ডলে মানব সন্তানের বিস্তার লাভ শুরু হয়। তাইতো হযরত আদম (আ)-কে আদি পিতা বলা হয়।
নবী-রাসূলের প্রয়োজনীয়তা:
আদিপিতা হযরত আদম (আঃ)-এর পৃথিবীতে আগমনের পর থেকেই এ পৃথিবীতে মানব বসতির সূচনা হয়। ধীরে ধীরে যখন আদম সন্তান পৃথিবীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়তে লাগল তখন মানব জাতির মধ্যে শয়তান স্বীয় কু-মন্ত্রণা দিয়ে তাদেরকে বিপথগামী করতে লাগল আর মানুষ তখন স্বীয় সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে গেল। বিভিন্ন ধরনের কুৎসায় লিপ্ত হতে লাগল তারা।
আর সেই দুযোর্গময় মুহূর্তে মানবতার মুক্তির জন্য প্রয়োজন ছিল মুক্তির দিশারী কিছু মহামানবের আগমনের। দয়াময় মেহেরবান আল্লাহ্ ঐ সময় মানবজাতির রুশদ ও হিদায়াতের জন্য প্রেরণ করেছেন যুগে যুগে অসংখ্য নবী ও রসুলগণকে। যাদেও সঠিক সংখ্যা আল্লাহ্ তায়ালা ছাড়া আর কেউ বলতে পারে না। তবে নুপাতিক হারে বলা হয় তাদের সংখ্যা এক লক্ষ বা দু লক্ষ চব্বিশ শল্পীও।
পয়গম্বর প্রেপর এ সুমহান ধারার সূচনা হয়েছিল আদিপিতা হযরত আদম (আঃ) হতে এবং এর পরিসমাপ্তি হয়েছে সায়্যিদুল মুরসালীন খাতামুন্নাবিয়ীন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর মাধ্যমে।
কয়েকজন নবীর মবারক নাম:
হযরত আদম (আঃ)। হযরত শীস (আঃ)। হযরত ইসমাঈল (আঃ)। হযরত ইসহাক (আঃ)। হযরত ইয়াকুব (আঃ)। হযরত ইউসুফ (আঃ)। হযরত দাউদ (আঃ)। হযরত সুলায়মান (আঃ)। হযরত মুসা (আঃ)। হযরত হারুন (আঃ)। হযরত ইয়াহইয়া (আঃ)। হযরত যাকারিয়া (আঃ)। হযরত ইয়াস (আঃ)। হযরত ইউনুস (আঃ)। হযরত সৃত (আঃ)। হযরত সালেহ (আঃ)।
হযরত হুদ (আঃ)। হযরত শুয়াই। ('আঃ)। হযরত হিস্টীল (আঃ)। হযরত ইউশা ইবনে নূন (আঃ)। হযরত 'পাগউইন (আঃ)। হযরত ঈসা (আঃ) ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (সঃ)।
আসমানী গ্রন্থ:
আল্লাহ্ তায়ালা মানব জাতির হিদায়েতের জন্য যুগে যুগে প্রেরণ করেছেন অসংখ্য নবী ও রাসূল। আর তাঁদের প্রতি যে প্রত্যাদেশ বা হুকুম-আহকাম অবতীর্ণ করেছেন, তাই ইতিহাসে ছহীফা ও আসমানী গ্রন্থ হিসেবে পরিচিত। এ আসমানী গ্রন্থসমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হল 'আল কুরআন" যা সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে। সুদীর্ঘ তেইশ বছর পর্যন্ত সময় ও চাহিদার প্রেক্ষিতে ধীরে ধীরে অবতীর্ণ করা হয়েছে।
এছাড়া তাওরাত হযরত মুসা (আঃ)-এর উপর, যার হযরত দাউদ (আঃ)-এর উপর, ইঞ্জিল হযরত ঈসা (আঃ)-এর উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে। সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (স) হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ নবী। তারপর কোন নবী আসবে না।
হ্যাঁ তবে হযরত ঈসা (আ) কিয়ামতের পূর্বে তাঁর উম্মত হয়ে পৃথিবীতে আগমন করবেন। আর তার উপর অবতীর্ণ কিতাব কুরআন মাজীদের পর আর কোন নতুন কিতাব আসবে না। সর্বশেষ নবীর আগমন ও সর্বশেষ কিতাবের অবতরণের পর পূর্বেকার সকল ধর্ম রহিত হয়ে গেছে। কাজেই পূর্বের ধর্মের কোন আইন-কানুন, আদেশ-নিষেধ বর্তমান যুগের জন্য প্রযোজ্য হবে না।