সর্বশেষ নবীর সংক্ষিপ্ত পরিচয়:
নাম মোহাম্মদ, পিতা আব্দুল্লাহ্, দাদা আব্দুল মুত্তালিব। মাতা আমেনা, দুধ-মা হযরত হালীমা সাদীয়া (রাঃ)।
তাঁর বংশ পরস্পরা এভাবে-মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব, ইবনে হাশিম, ইবনে আবদে মনাফ,ইবনে কুসাইবিনে কিলাব ইবনে কুররাহ, ইবনে কা'ব, ইবনে লুওয়াই, ইবনে গালিব, ইবনে ফিহার, ইবনে মালিক ইবনে নাযাগ, ইবনে কিনানাহ্, ইবনে কুযায়মা, ইবনে মুদরিকাহ্, ইবনে ইলয়াম, ইবনে মুদার, ইবনে নিয়ার, ইবনে মাআদ, ইবনে আদনান।
এ পর্যন্ত বংশ পরস্পরা সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত।এরপর থেকে হযরত আদম (আঃ) পর্যন্ত বংশ পরস্পরায় মতানৈক্য রয়েছে।
হুজুর (সঃ)-এর জন্য:
তিনি ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ২০ শে এপ্রিল মুতাবিক হিজরী পূর্ব ৫৩ সালের ১২ রবিউল আউয়াল সুবহে সাদেকের সময় আরবের সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্যের সময় হযরত আমেনার পেট হতে একটি আলোকবর্তিকা নির্গত হয়। যা পূর্ব পশ্চিমে আলোকিত করে ফেলে। পারস্য রাজ কিসরার শাহী মহলে ভূমিকম্পন শুরু হয়। ফলে চৌদ্দটি গম্বুজ ধ্বসে পড়ে।
পারস্যের শ্বেত উপসাগর হঠাৎ করে শুকিয়ে যায়। পারস্যের হাজার বছরের পুরাতন অগ্নিকুণ্ড আকস্মিকভাবেই নির্বাপিত হয়ে যায়। ভূমিষ্ঠ হয়ে হুজুর (সঃ) হাতে এক মুষ্ঠি মাটি নিয়ে আকাশের দিকে তাকান।
রাসূল (সঃ)-এর পিতৃবিয়োগ:
নবী করীম (সঃ)-এর জন্মের সাতমাস পূর্বে পিতা আব্দুল্লাহ্ তার পিতা আব্দুল মুত্তালিবের নির্দেশে খেজুর আনয়ন করতে মদীনায় গমন করেন। রাসূল (সঃ) তখন মাতৃগর্ভে। নিয়তির এ খেলা কে বুঝতে পারে? সে সফরই ছিল তাঁর অন্তিম সফর। সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার আগেই তিনি মদীনার পথে ইহধাম ত্যাগ করেন।
হালিমা সা'দিয়ার কোলে মোহাম্মদ (সঃ):
মক্কার সম্ভ্রান্ত বংশের নিয়ম ছিল। তারা তাদের সন্তানকে জন্ম দেয়ার পর দুগ্ধ পানের জন্য পার্শ্ববর্তী কোন অঞ্চলে পাঠিয়ে দিতেন। যেন শিশুরা সু-স্বাস্থ্য ও বিশুদ্ধ ভাষা আয়ত্বে করতে পারে। অপরদিকে বিভিন্ন মওসুমে গ্রাম্য মহিলরাও মক্কায় দুগ্ধ পোষ্য শিশুর সন্ধানে বিচরণ করত।
নবী করীম (সঃ)-এর ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তায়েফের বনী সাদ গোত্রের সাথে দুগ্ধ পোষ্য নবজাতকের সন্ধানে হালিমা সাদিয়া (রাঃ)-ও মক্কায় গমন করেন। তায়েফে তখন চলছিল দুর্ভিক্ষ।
দুর্ভিক্ষের কারণে অনাহারে অর্ধাহারে হালিমার স্তন গিয়েছিল শুকিয়ে। তার কোলের সন্তানও পর্যাপ্ত সুধ পেত না। ফলে সারা রাত ক্রন্দন করে কাটাত। তবুও উত্তম পুরষ্কারের লোভে হালিমা দুগ্ধ পোষ্য নবজাতকের সন্ধানে মককায় গমন করেন।
হালিমার আরোহী গাধাটি ছিল খুবই দুর্বল। ফলে সে সঙ্গী-সাথীদের সাথে চলতেও ছিল অক্ষম। তাই তার সঙ্গী-সাথীরা অত্যন্ত অবজ্ঞা ও বিরক্তি বোধ করছিল। যাহোক, বহু কষ্টে তিনি মক্কায় পৌঁছলেন। কিন্তু মককায় পৌঁছে সকরেই স্বীয় পছন্দ মত নবজাতক নিয়ে প্রস্থানের প্রস্তুতি নিল।
তবে হালিমার দুর্বলতার কারণে তার ভাগ্যাকাশে কোন নবজাতকের সন্ধান মিলল না। অপরদিকে মুহাম্মদ (সঃ) নিতান্ত পিতৃহীন হওয়ায় কোন মহিলাই তাকে। গ্রহণ করতে রাজি হচ্ছিল না। কেননা এতে পর্যাপ্ত পারিশ্রমিকের সম্ভাবনা ছিল না। রাতের বেলায় স্বামী-স্ত্রী দু'জনেই বাক্যালাপের পর এ সিদ্ধান্তে উপনীত হল যে, শূন্য হাতে ফিরে যাওয়ার চাইতে এই এতীম শিশুটি নিয়ে যাওয়াই ভাল। তাই তারা মা আমেনার কাছ থেকে শিশু মোহাম্মদ (সঃ) কে স্বীয় তাবুতে নিয়ে আসল।
রহমত বরকতের বারিধারা:
এই ইয়াতীম শিশুকে নিয়ে তাবুতে যাওয়ার সাথে সাথেই রহমত ও বরকতের বারিধারা যেন তাদের উপর বর্ষিত হতে লাগল। হালিমার দুগ্ধ শূন্য স্তন দুধালো হয়ে গেল। স্বীয় সন্তান আব্দুল্লাহ ও নতুন সন্তান মোহাম্মদ তৃপ্তি সহকারে দুধ পান করে ঘুমিয়ে পড়ল।
আজ বহুদিন পরে এ দম্পতি একটু আরামে নিদ্রা যেতে পারলেন। প্রভাতের রবী উদয়ের পূর্বেই স্বামী জেগে উঠে বলল, হালিমা! তুমি অতি ভাগ্যবতী! তুমি অত্যন্ত পূণ্যবান এক শিশু নিয়ে এসেছ।
তায়েফ প্রত্যাবর্তন:
প্রভাতেই তারা সদলবলে স্বর্গভূমি তায়েফ অভিমুখে রওনা হল। এবারে হালিমা ও তার স্বামীকে দেখা গেল ভিন্ন চিত্রে। যে হালিমা সাথী-সঙ্গীদের বিরক্তির কারণ ছিল সে হালিমা এখন সবেচেয়ে দ্রুত চলতে লাগল। যার বাহন গাধাটি হাঁটতে ছিল অক্ষম সে গাধা সৌড়ে চলতে লাগল। যে সূর্যের কিরণে তারা ছিল অতিষ্ঠ সে সূর্য হ্যালিসার জন্য আরাস দায়ক হয়ে গেল।
হালিমার জন্য যে ভ্রমণ ছিল অত্যন্ত কষ্ট-ক্লেপের সে ভ্রমণ এখন তার জন্য হয়ে গেল আরাম-আয়েশের, আনন্দ-আহলাদের। ভ্রমন করতে করতে এক সময় তারা পৌঁছে গেল তায়েফে। বাড়িতে গিয়ে হালিমা দেখন তাসের সুখ ৩৪ ভাগলগুলোর স্তন্য দুধে পরিপূর্ণ হয়ে হয়েছে। এভাবেই বরকত ও রহসতের ছায়াতলে তাদের কেটে গেল দুটি বছর। দু'বছর পূর্ণ হয়ে যাওয়ার নিয়ম সাফিক তাঁকে তাঁর মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। তাই হালিমার হৃদয় আজ শিশুটির জন্য নীরবে-নির্জনে কাঁসছে।
কিন্তু কাঁসলে কি হবে-তাঁকে সর্বদা রাখা সম্ভব নয়। তাই হালিমা শিশুটির অবস্থান তার কাছে আর দীর্ঘায়িত করার কৌশল খুঁজছিল। ঘটনাক্রসে সে বছর সক্কায় সহাসারি দেখা দেয়। আর হালিমা এ মহামারির অজুহাত দেখিয়ে তিনি তাঁকে পুনরায় তায়েফে দিয়ে এলেন।
একদিনের ঘটনা :
একদিন শিশু মোহাম্মদ (সঃ) তার দুধমাকে জিজ্ঞেস করলেন যে, আমার ভাই আব্দুল্লাহ সারাদিন কোথায় থাকে? জবাবে হালিমা সাদিয়া (রাঃ) বললেন, সে তো ছাগল চড়াতে মাঠে যায়। তিনি বললেন। তবে আমি তার সাথে মাঠে যাব। তাই পরদিন থেকে তিনি আব্দুল্লাহর সাথে মাঠে যেতে লাগলেন। হঠাৎ একদিন আব্দুল্লাহ হাঁপাতে হাপাতে দৌড়ে এসে তার মাকে জানাল, মা।
আমার কুরাইশী ভাইকে দু'জন সাদা পোশাকধারী লোক ধরে নিয়ে বক্ষ বিদীর্ণ করে ফেলেছে। আমি সে অবস্থায় তাকে রেখে চলে এসেছি। হালিমা একথা শুনামাত্রই দৌড়ে মাঠে চলে এলেন।
এসে দেখলেন রাসূল (সঃ) একাকী সুস্থ বসে রয়েছেন। তবে তার চেহারা মোবারকে ভীতির ভাব স্পষ্টই পরিলক্ষিত হচ্ছে। হালিমা তাকে কোলে তুলে, সোহাগ করে নিয়ে জিজ্ঞাসিলেন, বৎস। তোমার কি হয়েছে? প্রতি উত্তরে তিনি বললেন, দু'জন সাদা পোষাকধারী লোক আমার পেট থেকে কি যেন বের করে নিয়েছেন।
হালিমা বাড়িতে এসে শিশু মোহাম্মদ (সঃ)-কে নিয়ে পার্শ্ববর্তী গণকের কাছে গেলেন। গণক তাকে দেখেই চিৎকার করে বলতে লাগল, ওহে তায়েফবাসী। তোমরা এ শিশুকে হত্যা কর। এ শিশুই তোমাদের বাপ-দাদার ধর্মকে খতম করে দিবে। আর সাথে সাথে আমাকে হত্যা কর। এ কথা শোনামাত্র হযরত হালিমা সাদিয়া (রাঃ) তাকে তিরস্কার করতে করতে চলে আসলেন।
মায়ের কোলে শিশু যোহাম্মদ (স):
এ ঘটনার পর হযরত হালিয়া সাদিয়া (রা)-এই হল। তিনি তার নিরাপত্তার অভাব অনুভব করতে লাগলেন। পরে প্রতিবা সত্ত্বের তাঁকে তাঁর হাতের কাছে ফিরিয়ে দিলেন। যা পারেনা এক ভূরিচ দেবত দেয়া সম্পর্কে ভিজাসা করলে হালিমা সানিয়া (বা) তাকে বিস্তারির বিবষণ খুলে বললেন। যা আমেনার এতে এ বিশ্বাস নিশ্চিতভাবে জরাস সে তার সন্তান নিশ্চয় কোন এক মহৎ বাতিতে পরিণত হবেন।
মা আসেনার ইন্তেকাল:
জন্তের পূর্বেই পিতৃহারা এ ইধাতাম শিশু মায়ের আদর আহলাসে বিন ভাটাতে লাগলেন। মা'ও তার সন্তানের ব্যাতি দেখার বাসনা নিয়ে স্বতন্তে লালন সাদন করতে লাগলেন। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছে ছিল অন্য একর। তিনি তার হাসীবের লালন-পালনের দায়িত্ব নিজ হাতে দিয়ে দিলেন এবং মার দু'বছর বয়সেই তাঁর থেকে মাতৃ দেবের বন্ধনকেও ছিন্ন করে দিলেন।
কিন্তু মারা, বড় হারা প্রথানের লালন-পালনের পূর্ণ দায়িত্ব বেলায় প্রহণ করলেও বাধা আব্দুল মুত্তালিব। পিতা-মাতার অবর্তমানে স্বীয় দৌহিত্রবে কাপর খুরের প্রায় লালন পালন করে বড় করতে লাগলো। ফলে পিয় (সঃ) পিতা বিরহের কথা দিন দিন ভুলে যেতে লাগলেন। কিন্তু আল্লাহ কারাগা এ খাতাটুকুও উঠিয়ে নিলেন। মাত্র দু'বছর পর অধীৎ এছন (স)-এই বয়স যখন আটে গতর সখন পাজল পাব্দুল মুত্তালিবক পরপারে চলে গেছেন।