অপারেশন জ্যাকপট নামক আক্রমণে এই বাহিনী বাংলাদেশে পক্ষে যুদ্ধ করে। মিত্রবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার নেতৃত্বে ১৯৭৭ সালের ২১শে নভেম্বর মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী মিলে গঠন করা হয় যৌথবাহিনী ১৯৭১ সালের ৩রা ডিসেম্বর হঠাৎ পাকিস্তান
বিমানবাহিনী ভারতের কয়েকটি বিমান ঘাঁটিতে বোমা হামলা চালায়। এর ফলে যৌথবাহিনী একযোগে সস্থল, নৌ ও আকাশপথে পাল্টা আক্রমণ করে। তীব্র আক্রমণের ফলে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। ফলে মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি।
ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে যৌথবাহিনীর পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা এবং পাকিস্তানের পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজি আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করেন। এর মধ্য দিয়ে আমাদের সত্যিকারের বিজয় অর্জিত হয়।
প্রতিবছর ১৬ই ডিসেম্বর আমরা বিজয়দিবস পালন করি। এর কিছুদিন পর ১৯৭২ সালের ৮ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করেন এবং ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন।
পাকিস্তান বাহিনীর গণহত্যা: ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে প্রেসিডেন্ট ইয়াওিয়ার নির্দেশে পশ্চিম্বার সেনাবাহিমা রাজারগা মার্চ রাতে পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে প্রেসিডোর সপ্তর, ঢাকা বিশ্ব আবাসিক হল ও শিক্ষকদের বাসভবনসহ ঢাকা শহরের বিভিয়াস্থানে একযোগে আক্রমণ করে এ সময় রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের পুলিশ সদস্যরা তাঁদের প্রি-নট থ্রি রাইফেল দিয়ে সশ্য প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
কিন্তু হানাদার বাহিনীর আধুনিক অস্ত্রের আক্রমণে তাঁরা টিকে থাকস্ে পারেন নি। সেই ভয়াল রাতে হানাদার বাহিনী দেশের অন্যান্য বড় বড় শহরেও আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পুলিশ ও ইপিআর সদস্যসহ অসংখ্য নিরীহ বাঙাল জনগণকে হত্যা করে।
এটি বিশ্বের বুকে নৃশংসতম গণহত্যা ও ভয়াবহ ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের এক ঘৃণিত উদাহরণ। (পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর এই আক্রমণের নাম। দিয়েছিল 'অপারেশন সার্চলাইট ঐ রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।
নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ বাঙালি শহিদ হন। এক কোটির বেশি মানুষ তাঁদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে প্রাণের ভয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশে সংঘটিত নির্মম গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে প্রতিবছর (২৫শে মার্চ 'জাতীয় গণহত্যা দিবস' পালন করা হয়।
এদেশের কিছু মানুষ মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। তারা শান্তিকমিটি, রাজাকার, আলবদর,আল-শামস নামে বিভিন্ন কমিটি ও সংগঠন গড়ে তোলে। এরা মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা তৈরি করে হানাদারদের দেয়। রাজাকাররা হানাদারদের পথ চিনিয়ে, ভাষা/ বুঝিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে সাহায্য করে।
মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশকে মেধাশূন্য করার পরিকল্পনা করে। ১০ই ডিসেম্বর থেকে ১৪ই ডিসেম্বরের মধ্যে তারা আমাদের অনেক গুণী শিক্ষক, শিল্পী, সাংবাদিক, চিকিৎসক এবং কবি-সাহিত্যিকদের ধরে নিয়ে হত্যা করে। তাঁদের স্মরণে প্রতিবছর ১৪ই ডিসেম্বর 'শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস' পালন করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধে সামগ্রা বাঙালি জাতি জড়িয়ে পড়েন। এ যুদ্ধে দল-মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। অংশগ্রহণ করেন। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষও এ যুদ্ধে অবদান রাখেন।
নারীরা মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার, আশ্রয় এবং তথ্য দিয়ে সাহায্য করেন। অনেক নারী প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেনা, সংস্কৃতি কর্মীরা তাঁদের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেন।
এছাড়াও প্রবাসী বাঙালিরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে স্বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার বীরত্বসূচক রাষ্ট্রীয় উপাধি প্রদান করে। মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসের সাথে যুদ্ধ করে শহিদ হয়েছেন এমন সাতজনকে বীরশ্রেষ্ঠ (সর্বোচ্চ) উপাধি প্রদান করা হয়। নিচে তাঁদের ছবি দেওয়া হলো।