১৭৫৭ থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত একশ বছর এদেশে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রবাট চাইভ ইতিহাসে যা কোম্পানির শাসন নামে পরিচিতছর এদেশের প্রথম শাসনকর্তা ছিলেন রবার্ট ক্লাইভ।
প্রায় একশ বছর পরে ১৮৫৭ সালে কোম্পানির নীতিও শোষণের বিরুদ্ধে সিপাহিদের মধ্যে অসন্তো দেখা দেয় এবং বিদ্রোহ করে। ইংরেজরা এই বিদ্রোহ দমন করলেও শাসন ব্যবস্থা আগের মতে চালাতে পারেনি।
কোম্পানির শাসন রদ করে ১৮৫৮ সালে বাংলাসহ সমগ্র ভারতের শাসনভার ব্রিটিশ রানি সরাসরি নিজ হাতে তুলে নেয় যা চলে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত। মীর কাশিম রবার্ট ক্লাই রাজা রামমোহন রায়
ব্রিটিশ শাসনের কিছু খারাপ দিক:
ভাগ কর শাসন কর' নীতির ফলে এদেশের মানুষের মধ্যে জাতি, ধর্ম, বর্ণ এবং অঞ্চলভেদে।
বিভেদ সৃষ্টি হয়।
অনেক কারিগর বেকার ও অনেক কৃষক গরিব হয়ে যায় এবং বাংলায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এই
ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ বাংলা ১১৭৬ সালে (ইংরেজি ১৭৭০) হয়েছিল যা 'ছিয়াত্তরের মন্বন্তর' নামে পরিচিত। • অল্পসংখ্যক জমিদার অনেক জমির মালিক হন এবং বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ গরিবগ হয়ে যায় ব্রিটিশদের 'ভাগ কর শাসন কর' নীতির ফলে কী হয়েছিল?
ব্রিটিশ শাসনের কিছু ভালো দিক:
নতুন নতুন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার ফলে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি হয়।সড়কপথ ও রেলপথ উন্নয়ন এবং টেলিগ্রাফ প্রচলনের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার বিশেষ উন্নতি হয়।শিক্ষা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে উনিশ শতকে বাংলায় নবজাগরণ ঘটে।এসময় সামাজিক সংস্কারসহ শিক্ষা, সাহিত্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসার ঘটে।
আঠারো শতকের শেষভাগ থেকে উনিশ শতক জুড়ে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে অনেকবার বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। এমনই একটি আন্দোলনে বিদ্রোহী নেতা তিতুমির ইংরেজ বাহিনীকে প্রতিহত করার জন্য বারাসাতের কাছে নারকেলবাড়িয়া গ্রামে একটি বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন। ১৮৩১ সালে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এক যুদ্ধে তিতুমির পরাজিত ও নিহত হন।
পরবর্তী প্রতিরোধ ও আন্দোলন:
বিশ শতক পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলতে থাকে। শিক্ষা প্রসার এবং নবজাগরণের। ফলে দেশপ্রেমের চেতনা বিস্তার লাভ করে। ১৮৮৫ সালে 'ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস' নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠিত হয়।
ব্রিটিশরা ভারতীয় জাতীয় চেতনার প্রসারে ভীত হয়ে পড়ে এবং ১৯০৫ সালে বাংলা প্রদেশকে ভাগ করাটা সিদ্ধান্ত নেয়, একে বাভক্তা বলে। আসামকে অন্তর্ভুক্ত করে পূর্ববাংলা অঞ্চল গঠিত হয়। ৫। কিন্তু এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হলে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয় অর্থাৎ দুই বাংলাকে একত্রিত করে দেওয়া হয়। রাজনৈতিক আন্দোলনের পরবর্তী ধাপ ছিল ১৯০৬ সালে ভারতীয় মুসলিম লীগ নামে রাজনৈতিক
দল গঠন। ভারতের বড় আন্দোলনগুলোর মধ্যে ছিল ফরাজ আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন এবং সশস্ত্র যুব বিদ্রোহ। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ক্ষুদিরাম বসু, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এবং মাস্টারদা সূর্যসেনের আত্মত্যাগ ও সাহসিকতা চিরস্মরণীয়।
প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভারতের অনেক সাহসী তরুণ ব্রিটিশদের পক্ষে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু তাই বলে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেমে থাকেনি, স্বাধীনতার জন্য ভারতীয়দের আন্দোলন চলতে থাকে।
রাজনৈতিক আন্দোলনের তৃতীয় ধাপে নেতৃত্ব দিয়েছেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু এবং শের-ই-বাংলা এ. কে. ফজলুল হক। এসময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ লেখকের কবিতা, গান ও লেখার মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধিকার চেতনা আরও বেগবান হয়।
নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া এসময় নারীশিক্ষা প্রসারে পুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। অবশেষে ১৯৪৭ সালে ইংরেজরা ভারত ভাগ করতে বাধ্য হয় এবং পাকিস্তান ও ভারত নামে দুইটি আলাদা রাস্ট্রের জন্ম হয়।
সোলারগাঁও ও লালবাগ কেল্লা সতের শতকের ঐতিহাসিক নিদর্শন। সোনারগাঁও ঢাকার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলায় দেখনা নদীর তীরে অরনিশ্বত। সোনারগাঁও প্রাচীন বাংলার মুসলমান সুলতানদের ভাজধানী ছিল। এখনও সেখানে সুলতানি আমলের অনেক সমাধি ওয়েন্তে, গার একটি গিয়াসউদ্দিন।শের সোনারগাঁও এর পরিবর্তে ঢাকায় রাজধানী স্বাপন করা হয়। উনিশ শতকে হিন্দু বণিকদের সুতা বাণিজোর কেণ্য হিসেবে এখানে পানাম নগর গড়ে ওঠে। সোনারগাঁও-এর গৌরব ধবে করেন। লোকশিল্প জাদুঘরটি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।
লালবাগ কেল্লা ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিমে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ১৬৭৮ সালে লালবাগ কেল্লা নির্মাণ করা হয়। আওরঙ্গজেবের পুত্র শাহজাদা মোহাম্মদ আধম শাহ্ এই দুর্গটির নির্মাণ কাজ শুরু করলেও শেষ করতে পারেননি। দুর্গটি সম্পূর্ণ ইটের তৈরি। দুর্গের মাঝখানে খোলা জায়গায় মোগল শাসকগণ তাঁবু টানিয়ে বসবাস করতেন। দুর্গের দক্ষিণে গোপন প্রবেশপথ এবং একটি তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ রয়েছে। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হিসেবে ব্যবহত হচ্ছে।
আহসান মঞ্জিল ছিল বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে নির্মিত বাংলার নবাবদের রাজপ্রাসাদ। মোঘল আমলে জামালপুর পরগনার জমিদার শেখ এনায়েতুল্লাহ এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। আঠারো শতকে তাঁর পুত্র শেখ মতিউল্লাহ প্রাসাদটিকে বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহারের উদ্দেশে ফরাসি বণিকদের কাছে /বিক্রি করে দেন। ১৮৩০ সালে খাজা আলিমুল্লাহ ফরাসিদের নিকট থেকে এটিকে ক্রয় করে আবার প্রাসাদে পরিণত করেন। এই প্রাসাদকে কেন্দ্র করে খাজা আব্দুল গণি একটি প্রধান ভবন। নির্মাণ করেন। তিনি তাঁর পুত্র খাজা আহসানউল্লাহর নামানুসারে ভবনটির নামকরণ করেন আহসান মঞ্জিল।
১৮৮৮ সালে ঘূর্ণিঝড়ে এবং ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে তা মেরামতও করা হয়। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রাসাদটির তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর এর প্রাচীন ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা হয়।
এই প্রাসাদে রয়েছে লম্বা বারান্দা, জলসাঘর, দরবারহল এবং রংমহল। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আহসান মঞ্জিল বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য নিদর্শন।