(toc)
হায়েয থাকাকালীন অবস্থায় সহবাস নিষেধ:
হায়েয অবস্থায় সহবাস করা ইসলামে হারাম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কাজেই ইসলাম যেটা হারাম করেছে তার কাছে যাওয়া কত বড় অন্যায়। প্রতিটি জিনিসই পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ইসলাম যেটা নিষেধ করে, বর্তমান বিজ্ঞানের যুগেও তাকে কেউ ভুল বলতে পারে নাই। হায়েয অবস্থায় সহবাস করলে যদি গর্ভে সন্তান আসে তবে সন্তান বিকলাঙ্গ হওয়ার বা কমজোরী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হায়েযের সময় মেয়েদের জরায়ু খুব দুর্বল থাকে। তখন সহবাস করলে জরায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ভীষণ অসুখে পতিত হতে পারে।
হায়েয অবস্থায় মেয়েদের জৈবিক চাহিদা বেড়ে যায়। কাজেই এই অবস্থায় প্রত্যেক স্ত্রীলোককে সতর্ক থাকতে হবে। তাদের অধিক পরিমাণে ধৈর্য ধরতে হবে। এই অবস্থায় স্বামীর সাথে এক বিছানায় শয়ন করা ঠিক নয়। কারণ স্বামী স্বামী যদি ধৈর্য ধরতে না পারে। স্বামী যদি তার জৈবিক চাহিদা মিটাইতে চায়। তবে যতদূর সম্ভব নিজেকে বাঁচাইয়া চলার চেষ্টা করবে। স্বামীর চিন্তা করা উচিত যে, যাকে সারাজীবন ভোগ করবে তাকে অল্প সময়ের জন্য ক্ষতি করে কি লাভ হবে। হয়ত সাময়িক চাহিদা মিটে যাবে, যৌন উত্তেজনা কমে যাবে কিন্তু এর মাধ্যমে স্ত্রী বিরাট ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তখন সারাজীবন। আফসোস করেও কোন লাভ হবে না। কাজেই এই অবস্থায় স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই সংযম অবলম্বন করতে হবে।
নেফাসের বর্ণনা:
স্বামী-স্ত্রী সহবাস করার ফলে স্ত্রী গর্ভবতী হয়। গর্ভ ধারণের দশ মাস দশ দিন পর গর্ভের সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে নয় মাসেও সন্তান ভূমিষ্ঠ হতে দেখা যায়। এই সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর প্রসবের রাস্তা দিয়ে যে রক্ত বাহির হয় তাহাকে নেফাস বলে। নেফাস চল্লিশ দিন পর্যন্ত থাকে। যদি চল্লিশ দিনের পরেও রক্ত দেখা যায়, তবে চল্লিশ দিন পরেই গোসল করে পাক পবিত্র হতে হবে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে চল্লিশ দিনের কম নেফাস থাকে। যখনই নেফাসের রক্ত বন্ধ হয়ে যাবে সাথে সাথে গোসল করে পবিত্র হতে হবে। এবং নামায রোযা যা হুকুম আছে করতে থাকবে।গর্ভবতী নারীর জরায়ু দিয়ে যদি প্রসবের আগে রক্ত বাহির হয়, তবে তা নেফাসের রক্ত হবে না তা হবে এস্তেহাজা। এই অবস্থায় গোসল করে নামায় রোযা আল্লাহর হুকুম আহকাম পালন করবে।হায়েয নেফায ছাড়া অন্য যে কোন সময় স্ত্রীর জরায়ু দিয়ে রক্ত বের হলে তাকে এস্তেহাজা রোগ বলে ধরতে হবে। এই অবস্থায় গোসল করে পবিত্র হবে। নারীদের জরায়ুর ভিতরে অনেক শিরা উপশিরা আছে। অনেক সময় রোগের কারণে কোন শিরা ছিড়ে যায় ফলে রক্ত বের হতে থাকে। যে সমস্ত স্ত্রীলোকের এস্তেহাজা রোগ হয়েছে তাদের উচিত নামাযেয় ওয়াক্ত হলে জরায়ু পরিষ্কার করে ধুয়ে নামায আদায় করে। প্রতি ওয়াক্ত নামাযে নতুনভাবে অযু করতে হবে। কোরআন পাঠ করতে পারবে এবং স্বামী সহবাসও করতে পারবে।
হায়েয নেফাসওয়ালা স্ত্রীলোকের কর্তব্য:
যে স্ত্রীলোক হায়েয বা নেফাস অবস্থায় আছে অথবা যাহার উপর গোসল করা ফরয হয়ে গেছে তার জন্যে মসজিদে প্রবেশ করা, কাবা শরীফ তাওয়াফ করা কোরআন পাঠ করা এবং স্পর্শ করা জায়েয নাই। অবশ্য কোরআন শরীফ যদি গিলাপ দিয়ে মোড়ানো থাকে তবে গিলাপের উপর হাত দিয়ে ধরতে পারবে।হায়েযের অবস্থায় অযু করে পাক জায়গায় বসে নামাযের সময় পরিমাণ বসে আল্লাহর জিকির করতে পারবে। যাতে নামাযের অভ্যাস ছুটিয়া না যায়।কোন স্ত্রীলোকের গোসল ফরয হয়েছে কিন্তু ঐ অবস্থায় হায়েয হয়ে গেলে তার আয় গোসল করার প্রয়োজন নেই। যখন হায়েয হতে পাক হবে তখন গোসল করলে পূর্বের গোসল আদায় হয়ে যাবে।হায়েয নেফাস অবস্থায় আল্লাহর কাছে দোয়া করা যায়। কোরআনের যে আয়াতের মধ্যে দোয়া আছে সেই আয়াত যদি কেহ তেলাওয়াত রূপে না পড়ে দোয়া রূপে পড়িয়া আল্লাহ পাকের নিকট দোয়া চায় তবে তাহা জায়েয আছে।
হায়েয-নেফাস জানাবাত অবস্থায় কালেমা, দরূদশরীফ পড়া, আল্লাহর জিকির করা, এস্তগফার পড়া, তাসবীহ পড়া জায়েয আছে।যদি কোন স্ত্রীলোকের গর্ভপাত হয়। যদি সন্তানের দুই একটা অঙ্গপরিষ্কার দেখা যায় তবে গর্ভপাতের পরে যে রক্তস্রাব হবে উহাকে নেফাস ধরতে হবে। আর যদি সন্তানের আকৃতি বোঝা না যায়। শুধুমাত্র একটা মাংসপিও দেখা যায়। তবে দেখতে হবে যে এর আগে কমপক্ষে পনের দিন পবিত্র ছিল কিনা, এবং রক্তস্রাব তিন দিন তিন রাত্রি প্রবাহিত হয় কিনা, যদি এমন হয় তবে উহাকে হায়েয বলে গণ্য করতে হবে। আর যদি এমন না হয় তবে ঐ রক্তকে এস্তেহাজা ধরতে হবে।
হায়েয এবং নেফাস অবস্থায় সিজদার আয়াত শ্রবণ করলে সিজদা দিতে হবে না। হায়েয নেফাস অবস্থায় যাওয়ার পূর্বে বিসমিল্লাহ এবং খাওয়ার পরে আলহামদুলিল্লাহ বলতে পারবে। রোযা থাক অবস্থায় সূর্যাস্তের পূর্বে হায়েয বা নেফাস আরম্ভ হলে ঐ দিনের রোযা কাযা করতে হবে। হায়েয-নেফাস অবস্থায় স্ত্রীলোকে রান্না-বান্না করিতে পারবে এবং তার রান্না করা খাদ্যদ্রব্য খাওয়া যাবে। স্বামী ঘৃণা করে আলাদা বিছানায় থাকা ঠিক হবে না। হায়েয নেফাস অবস্থায় রোযা রাখা, নামায পড়া হারাম কিন্তু পবিত্র হওয়ার পরে কাযা আদায় করতে হবে।
ধাতু বা শুক্রের সৃষ্টি হয় কিভাবে:
মানুষ জীবন ধারণের জন্য যে বস্তু আহার করে, উহা পরিপাক হয়ে কিছু অংশ শরীরের পুষ্টি সাধনের জন্যে থেকে যায় আর বাকি অংশ মলমূত্র হয়ে বাহির হয়ে যায়। শরীরে খাদ্যের যে সারবস্তু থেকে যায় তাহা হতেই রক্তের সৃষ্টি হয়। উক্ত রক্তের ফোটার মধ্যে হতে রিফাইন করে এক ফোটা ধাতু বা শুক্র সৃষ্টি হয়। ইহা আল্লাহপাকের এক কুদরতী খেলা। এই শুক্রই পিতার রক্তে সংরক্ষিত থাকে এবং স্বামী-স্ত্রী মিলিত হলে এই শুক্র নারীর জরায়ু দিয়ে গর্ভে প্রবেশ করে সন্তান জন্ম নেয়। যে সমস্ত শিশুর ভিতর শুক্রোর অংশ কম থাকে তাহারা শক্তিহীন হয়ে জন্ম গ্রহণ করে। শরীরে এই শুক্র বেশি করে সৃষ্টি করতে ভাল ভাল পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া উচিত। এই শুক্রকে মানব দেহের প্রাণ বলা হয়। এই শুক্রই মানব দেহের যৌন উত্তেজনা শক্তি বৃদ্ধি করে। ইহাকে মানুষ তৈরির বীজ বললে ভুল হবে না। আল্লাহ পাক তাঁর সৃষ্টির ধারাবাহিকতা এভাবে রক্ষা করছেন।
পুরুষ ও নারীর ধাতুর পার্থক্য:
পুরুষ এবং নারীর ধাতুর মধ্যে কিছুটা পার্থক্য আছে। নারীর ধাতু পাতলা এবং কিছুটা হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে। পুরুষের ধাতু ঘন ও সাদা রংয়ের হয়ে থাকে। ধাতু সাধারণত কম বয়সের সময় পাতলা থাকে কিন্তু বয়স বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ধাতু-গাঢ় হয়। অনেক সময় স্বাস্থ্য দুর্বলতার জন্য পুরুষের ধাতু পাতলা হয়ে যায়।পুরুষের অণ্ডকোষের ভিতর এক ধরনের আঠা জাতীয় পদার্থ জমা হয়ে থাকে। সংগমের সময় ঐ পদার্থ স্বামীর শুক্রের সহিত মিশে স্ত্রীর যৌনাঙ্গে প্রবেশ করে। আর ইহাতে সন্তান জন্ম হয়। সব শুক্রতেই আবার সন্তান হয় না। যে সমস্ত পুরুষের অণ্ডকোষে ঐ ধরনের আঠাল পদার্থ নাই তাহাদের স্ত্রী সহবাসে সন্তান হয় না। মেয়েদের আবার ডিম্বকোষ আছে। ঐ ডিম্বকোষের ডান দিকে একটি নালী থাকে। ঐ নালীর মধ্যে হায়েয হওয়ার চৌদ্দ দিন আগে একটি ডিম্বক ফুটে যায় আর স্বামীর শুক্রকীট ঐ ডিম্বের মধ্যে প্রবেশ করলেই সন্তান জন্ম লাভ করে থাকে।
আসসালামু আলাইকুম আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের পছন্দ হবে।
থ্যাংক ইউ ফর সিয়াম হাসান নিউস লিমিটেড কে ধন্যবাদ আমাকে লেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য তাদের প্লাটফর্মে