বাসর ঘরে দ্বিতীয় দিন
আগের দিনের অমায়িক ব্যবহারে স্ত্রীর মন স্বামীর প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েছিল। সারাদিন স্বামীর কথা তার মনে হইতেছিল। দ্বিতীয় রাত্রির আশায় অধির আগ্রহে প্রহর গুণতে থাকে। নববধূ অযু করে এশার নামায পড়ে তাদের ঘরে বসে কোরআন তেলাওয়াত করছিল। কোরআন পাঠ করে আর দরজার দিকে আড় নয়নে তাকায় যে, স্বামী আসছে কিনা। স্বামী এসে পড়ার পর অযু করার জন্য পানি এনে দেয়। স্বামী অযু করে ঘরে আসে আর নববধু জায়নামায বিছাইয়া দেয় এশার নামায পড়ার জন্যে। এশার নামায পড়ার পরে দুইজনে মিলে ভাত খেতে যায়। দুইজনে পাশাপাশি বসে ভাত খায়। আর টুকটুক করে গল্প করে। ভাত খাওয়ার পর স্বামীকে পান বানাইয়া দেয়। স্বামীর সাথে নিজেও একটা খায়
রাত অনেক হয়েছে ভেবে দেরী না করে ঘুমাতে গেল। দুজন পাশাপাশি শুয়ে বিভিন্ন ধরনের গল্প করতে লাগলো। কত ধরনের গল্প করে মনে হয় যেন এই গল্প আর কোন দিন ফুরাবে না। তার পরে উভয়ে উভয়েকে চুমো দিতে দিতে ঘুমিয়ে পড়লো। রাত শেষের দিকে মোয়াজ্জিন আযান দিল আসসালাতু খাইরুম মিনান্নাউম। ঘুম হতে নামায উত্তম। তোমরা উঠ। স্ত্রী জাগনা পেয়ে উঠে স্বামীকে নামাযের জন্য জাগিয়ে তুললো। তারপর পাক পবিত্র হয়ে ফযরের নামায আদায় করলো। তারপরে দুজনে পাশাপাশি চেয়ারে বসে আলাপ আলোচনা করতে লাগলো। স্বামী বলতে লাগলো, আল্লাহ পাকের অশেষ মেহেরবানীতে আজ আমরা দুটি প্রাণ বিবাহের মাধ্যমে একটি প্রাণে পরিণত হয়ে গেলাম। এতদিন আমরা উভয়ে ছিলাম অপূর্ণ আজ উভয়েই পূর্ণতা লাভ করেছি। তুমি হলে আমার জীবনসঙ্গীনী। আজ হতে তুমি হবে আমার সমস্ত সুখ-দুঃখের সাথী এবং আমিও হইব তোমার সুখ-দুঃখের সাথী। আমাদের একের গৌরবে অপরের মন ভরে উঠবে।
দাম্পত্য জীবনে আমাদের একটি সুখের সংসার গড়ে তুলতে হবে। এই কাজে একদিকে আমাদিগকে পরিপূর্ণ আল্লাহর উপর নির্ভর করতে হবে। আল্লাহ পাকের হুকুম আহকাম ঠিকভাবে পালন করতে হবে। তবেই আমাদের দুজনের দাম্পত্যরীবনের অন্তর্নিহিত ভাব উপলদ্ধি করতে পারব।
বাসর ঘরে তৃতীয় রাত্রি যাপন
বাসরঘরে তৃতীয় হাতের দিন অলিমা অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এই দিন আত্মীয়-স্বজনে বাড়ি ভরে যায়। গ্রামবাসী পাড়াপ্রতিবেশী সবধরনের লোকের এইদিন সমাগম হয়ে থাকে। এইদিন ননদ ভাবীরা বধূকে আনন্দ উন্ন্যাস করে গোসল করাবে। তারপর সুন্দর করে সাজাবে। আমন্ত্রিত অতিথিগণ খানা খেয়ে নববধুর জন্য বিভিন্ন ধরনের উপহার সামগ্রী প্রধান করে দোয়া করে যায়। সারাদিন কর্মব্যস্ততার মধ্যে মানুষের কোলাহলের মধ্যে কেটে যায়। অলিমা ভোজের পর সাধারণত নববধুকে পিত্রালয়ে নিয়ে যাওয়ার হয়। রাত হয়ে গেলে এশার নামায আদায় করে নববধু সুন্দর সাজে বসে রইল। সারাদিন মানুষের কোলাহলের জন্য স্বামীকে একান্ত কাছে পায় নাই। স্বামীর জন্য টেবিলে খানা সাজাইয়া রেখে দিল। এক গ্লাস সরবত বানায়ে রাখল। তারপর নিজে বসে বসে কোরআন তিলাওয়াত করতে লাগলো। মুহূর্তের মধ্যে সময় শেষ হয়ে যায়। এদিন সাধারণত নববধূ একটু স্বাভাবিক হয়ে আসে। আগের দুদিনতো একেবারে লজ্জায় মাথা হেট হয়ে থাকত। ৩। স্বামী ঘরে আসল তাকে সালাম দিয়ে কদমবুছি করল। তারপর অযুর পানি এনে দিল। স্বামী অযু করে এসে এশার নামায আদায় করল। তারপর স্ত্রী তাকে খানা খেতে দিল। খানা খেয়ে একটু বিশ্রামের পর একগ্লাস সরবত এগিয়ে দিল। স্বামী তো ইহা দেখে খুশীতে আটখানা হয়ে গেল। তারপর অনেক কথাবার্তা হলো। স্ত্রী বলল,
আপনাকে কাল আমার সাথে পিত্রালয়ে যেতে হবে। বামী রাজি হল। এই ধরনের অনেক জানা না জানা আলাপ আলোচনা হল। আজ আর বেশি দেরী না করে শোয়ার জন্য প্রস্তুতি নিল। আজ যেন তারা
মত্যিকারের আনন্দ উপভোগ করতে লাগলো। পিতার বাড়ির কথা মনে হতেই নববধূর মন আনন্দে ভরে গেল। মনে হয় যেন কতদিন পিতামাতার সাথে দেখা সাক্ষাত হয় না। নানা ধরনের চিন্তা-ভাবনা করতে করতে উভয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। ভোরে মোয়াজ্জিন আযান দিল। ভাড়াতাড়ি উঠে ফখরের নামায আদায় করে। পিতার বাড়িতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলো।
স্বামী-স্ত্রী সহবাসের উত্তম সময়
স্বামী-স্ত্রী সহবাসের উত্তম সময় হল রাত্রির শেষভাগ। শেষরাতে সাধারণত খাদ্যদ্রব্য ঠিকমত হজম হয়ে যায়। শরীর এবং মন সম্পূর্ণ সুস্থ্য থাকে। এই অবস্থায় যদি স্ত্রী সহবাস করে তখন এই মিলনে উভয়েই পরম তৃপ্তি পায়। শেষ রাতের সহবাসে স্বাস্থ্যবান সুন্দর চরিত্র বিশিষ্টট সন্তান জন্য গ্রহণ করে। শেষ রাতে সহবাস করলে যেহেতু পূর্ণ তৃপ্তি পাওয়া যায় আর ঐ সময় স্ত্রী গর্ভবর্তী হলে তার গর্ভের সন্তান ধার্মিক, আউলীয়া-দরবেশ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গরমের দিনে ১৫ দিন পর পর এবং অন্যান্য সময়ে ৭ দিন পরপর স্ত্রী সহবাস করলে স্বাস্থ্য ও মন ভাল থাকে।
স্ত্রী সহবাসের দোয়া
الشيطان ما رزقتنا بسم الله ا
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি জান্নিবিন। শশাইত্বানা ওয়া জান্নিবিশ শাইত্বানা মা রাযাকতানা। অনুবাদঃ হে আল্লাহ আমাকে শয়তান হতে বাঁচার এবং আমার জন্য যা হালাল করেছ তাহা হইতে শয়তানকে বিতারিত কর।
ফরজ গোসলের নিয়ম
স্বামী-স্ত্রী সহবাস করার পর শরীর নাপাক হয়ে যায়। কাজেই গোসল ফরজ হয়। স্বামী-স্ত্রী সহবাস করা শরীয়তে সম্পূর্ণ বৈধ এবং হালাল। কিন্তু এই হালাল জিনিস ব্যবহারের পর শরীর কেন নাপাক হবে। এখানে আল্লাহ পাকের সৃষ্টির গোপন রহস্য কিছুটা নিহিত আছে। সহবাসের ফলে যেহেতু শরীর অপবিত্র হয়ে যায় কাজে গোসল ফরজ হয়ে যায়।
ফরজ গোসলের নিয়ত
لويتُ الْغُسل لرفع الْجَنَابَتِ
উচ্চারণ: নায়াইতুল গোসলা র্শিরাফয়ীল জানাবাতি। অনুবাদঃ নাপাকী দূর করার জন্য গোসলের নিয়ত করলাম।তাম
স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের নিষিদ্ধ সময়
স্ত্রীলোকের হায়েজ ও নেফাসের সময় স্ত্রী সহবাস করা নিষেধ। এ ছাড়াও দিনে দুপুর সময়, রাতের দ্বিপ্রহরে, বুধবার রাতে, রবিবার রাতে, অমাবস্যার রাতে, চন্দ্রমাসের প্রথম ও পনের তারিখ রাতে, কুরবানীর ঈদের রাতে, সূর্যের উত্তাপের মধ্যে, ছাদ বা চালা ছাড়া ঘরে, চন্দ্রগ্রহণ, সূর্যগ্রহণের সময় এবং প্রবাসে যাওয়ার পূর্বরাত্রিতে স্ত্রীসহবাস করা নিষেধ। হযরত হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, বুধবার রাতের সহবাসে সন্তান খুনি ও
অত্যাচারী হয়। রবিবারের রাত্রের সহবাস সন্তান হলে সে সন্তান মাতাপিতাকে কষ্ট দেয়। চাঁদের প্রথম ও পনের তারিখ রাত্রের সহবাসে সন্তান হলে ঐ সন্তান পাগল ও অত্যাচারি হয়। কুরবানীর ঈদের রাত্রের সহবাসের ফলে সন্তান হলে বাইশ আঙ্গুল বিশিষ্ট হয়। সূর্যের উত্তাপে সহবাস করলে ঐ সহবাসে সন্তান জন্ম নিলে সেই সন্তান অগ্নিপূজক হয়। বিদেশে গমনের পূর্বরাত্রে সহবাস করলে তাতে সন্তান হলে সে সন্তান অপব্যয়ী ও মাতাপিতার অবাধ্য হয়ে থাকে।
স্বামী-স্ত্রী সহবাসের পরে কি করতে হয়
স্বামী-স্ত্রী সহবাসে উভয়ের বীর্য বাহির হওয়ার পর কিছু সময় নড়াচড়া না করে মিলিত অবস্থায় থাকতে হবে। অর্থাৎ স্ত্রী নিচে এবং স্বামী উপরে থাকবে। ইহাতে বীর্য স্ত্রীর জরায়ুতে ঠিকমত প্রবেশ করিতে সুবিধা হয়। তাঁ না হলে বীর্য বাহিরে পড়ে যেতে পারে। আর বীর্য বাহিরে পড়লে গর্ভ সঞ্চার হয় না। সহবাসের পরে ঈষৎ গরম পানি দিয়ে যৌনাঙ্গ ধুয়ে ফেলতে হয়। ঠাণ্ডা পানিতে ধোয়া উচিত নয়। তারপর উভয়ে কিছু মধু সেবন
করবে। পরে উভয়ে ফরজ গোসল করবে। তারপর ফযরের নামায আদায় করবে।
সহবাস নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ
নিষিদ্ধ সময়ে স্ত্রী সহবাস করা খুবই খারাপ কাজ। জ্ঞানীরা বলেন, নিষিদ্ধ সময়ে স্ত্রী সহবাস শরীরের এবং মনের অনেক ক্ষতি সাধন করে থাকে। কিন্তু দোষ-ত্রুটি উল্লেখ
করা হল। ১. রোগী ব্যক্তি স্ত্রী সহবাস করলে তার রোগ আরও বেড়ে যায় এবং শরীরের ক্ষতি
হয়।
২. শরীরে জ্বর নিয়ে স্ত্রী সহবাস করলে পাগল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
৩. বৃদ্ধা ও বারবনিতার সংগে সহবাস করলে আয়ু কমে যায়।
৪. অত্যন্ত গরমের মধ্যে স্ত্রীসহবাস করলে পাগল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৫. রাগ, চিন্তা, কষ্ট ও ভয়জনিত অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করলে কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৬. অত্যন্ত ঠাণ্ডার ভিতরে সহবাস করলে নিউমোনিয়া রোগ হতে পারে।
৭. হায়েজের অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করলে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই মেহ-প্রমেহ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
৮. নিকৃষ্ট স্ত্রীর সাথে সহবাস করলে নিকৃষ্ট সন্তান জন্ম লাভ করে।
৯. ভরা পেটে স্ত্রী সহবাস করলে কঠিন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
* ১০. অন্ধকার ঘরে, ক্ষুদ্র বা নোংড়া জায়গায় স্ত্রী সহবাস করলে চিরতরে স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যায়।
১১. ভীষণ ক্ষুধার সময় স্ত্রী সহবাস করলে লিঙ্গ শিথিল হয়ে যায়।का ১২. বৃদ্ধ বয়সে স্ত্রী সহবাস করলে নিজেকে মৃত্যুর দিকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।